ওয়েব ডেস্ক: সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে কিছু সংখ্যক অসৎ আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও অসৎ রাজনীতিকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট সরকারের সকল ভালো উদ্যোগকে ব্যাহত করে দেয়। দুর্বৃত্তরা এখন আরও বেশি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। আগে আমরা শুনেছি নিয়োগ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে অধিগ্রহণ বাণিজ্য। আমাদের নতুন করে আর কত বাণিজ্যের কথা শুনতে হবে। এসব দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিকের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠা সিন্ডিকেটদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জনগণ বাজেটের প্রকৃত সুফল কোনোদিনই পাবে না।
সোমবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বলেন, আমাদের বাজেটের আকার কত বড় বা কত লক্ষ কোটি টাকা আমি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। এখানে আমার বক্তব্য হলো- বাজেটের আকারের চেয়েও মূল বিবেচ্য বিষয় হলো বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন। বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ অপচয় না করে প্রতিটি পয়সা যেন সঠিকভাবে জনগণের জন্য খরচ হয় তা নিশ্চিত করাটাই মূল কথা।
মোকাব্বির খান বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করার এক অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই মসজিদগুলোতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলিম নামাজ পড়বে, ধর্মের প্রকৃত আলোয় আলোকিত হবে। কিন্তু আমার নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় সিন্ডিকেট ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে একটি গ্রামের ভেতর ভূমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য সফল করতে নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগ, নির্বাচিত চেয়ারম্যান, স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কারও সাথেই কোনো রকম পরামর্শ বা মতামত নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এভাবেই ব্যাহত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ মহৎ উদ্যোগটি।
দ্বিতীয়ত, একইভাবে আমার নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগরে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণে সিন্ডিকেটের বাণিজ্যকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। যা আমি মহান এই জাতীয় সংসদের বিগত অধিবেশনে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
মোকাব্বির বলেন, বিগত সংসদ অধিবেশনে আপনার মাধ্যমে আমি শিক্ষামন্ত্রীকে আমার নির্বাচনী এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কীভাবে দুর্নীতি সংগঠিত হচ্ছে এবং পরবর্তীতে কীভাবে সরকারের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্থানীয় সিন্ডিকেট অধিগ্রহণের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তার দালিলিক প্রমাণ সরকারের বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। তাই আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে, ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ ও দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা তছনছ করে দিয়েছে। আমরাও এর থেকে ব্যতিক্রম নই। কঠিন এই সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ছিল। বর্তমানে ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে সরকার যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সেই প্রচেষ্টা প্রথম দিকে গ্রহণ করা হলে আজ জনজীবন এত হুমকির সম্মুখীন হতো না। তাই করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন ও ভ্যাকসিনসহ পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি সন্তোষজনক মজুত গড়ে তুলতে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
গণফোরামের এই সদস্য বলেন, এই সপ্তাহের শেষের দিকে দেশব্যাপী লকডাউন/শাটডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে। বিগত লকডাউনের সময় গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকদের যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সেটা সকল শ্রমিকের কাছে পৌঁছানো হয়নি। তাই এবারের লকডাউনে সরাসরি সকল ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে একটা প্রজন্ম আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ, শিল্প-কারখানা, হাট-বাজার সবকিছু খোলা থাকলেও দেড় বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, ছোট ছোট গ্রুপ করে, স্কুলিং সময়সূচিতে পরিবর্তন এনে, কারিকুলাম কাটছাট করে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অতিক্রম করেছে। অথচ আমার এই অঞ্চলের রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা, সেখানে নতুন রাস্তা পাকাকরণ ও পুরোনো রাস্তা সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া কিছু কিছু ব্রিজ, কালভার্ট ও বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসী বন্ধুরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। অন্যদিকে কিছু দুর্নীতিবাজ-লুটেরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে জাতীয় অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। তাই দেশের সকল অসৎ সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জাতির জনকের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।
মোকাব্বির আরও বলেন, আপনার মাধ্যমে আমাদের মহান সংসদ নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব- এই অসৎ সিন্ডিকেটকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে দিনব্যাপী আলোচনার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে জাতিকে সতর্ক করে গেছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস জাতির জনককে হারানোর পর এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কেউই শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেন নাই।