মোঃ আব্বাস আলী, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ থেকে: আজ ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। দিবসটি উদযাপন হচ্ছে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে। বর্তমান সময়ের এই পারিবারিক অবস্থা নিয়েও চলছে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা।
ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার সমাজের ভিত্তিমূল। হিন্দু ধর্ম মতে, পরিবার হচ্ছে একটি মন্দিরের মতো, যেখানে দেবতা স্বরূপ বাবা-মা বাস করে।আমরা এখন শুধুই আমার আমার বলতে শিখেছি, আমরা থেকে আমাদের বলা শিখতে হবে ও শিশুদের শিখাতেই হবে। তা না হলে বাচ্ছারা শেয়ারিং শিখবে কিভাবে? বাচ্ছারা স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিন বাক্স দিচ্ছি বলছিনা অন্যদের দিয়ে খেয়ো। এর ফলে শিশুদের মন বিকাশিত হচ্ছে না। আমাদের সময় আমার একটা ডিম ভাইবোন ভাগ করে খেতাম আর এখন ভাই থাকলে বোন নাই ভাগ করার জন্য কেউই নাই। যদিও থাকে তাদের আলাদা করে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী সবাইকে নিয়েই আমাদের পরিবার। মানুষ একান্নবর্তী পরিবারে বাস করার কারণেই সমাজবিজ্ঞানীরা পরিবারের সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন। সময়ের প্রয়োজনে এখন সেই চিত্র আর নাই। এখন স্বামী-স্ত্রী আর সন্তান মিলেই হচ্ছে পরিবার। একটা সময় যৌথ পরিবারের ভূমিকা অঅত্যান্ত ব্যাপক।
প্রতিটি পরিবারই একজন মানুষের শিক্ষা-দীক্ষার প্রথম বিদ্যাপীঠ হচ্ছে পরিবারের সবাই । সামাজিক আচার আচরণ, পরিবারের সবার প্রতি পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, হাসি আনন্দ দু:খ ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে দৃঢ় মানবিক হওয়ার গুণাবলি শিখতে থাকে । যে কারণে পরিবারকে সমাজের মৌলিক ভিত্তি বলা হয়। চার অক্ষরের এই “পরিবার” শব্দটির অর্থ অসীম। সামাজিক ঐক্য এবং পারস্পারিক নির্ভরতাই পরিবারের মূলমন্ত্র। ঢাকা শহরে একই বিল্ডিংয়ে পাশাপাশি ফ্লাটে থাকলেও সামাজিক রীতির আদান প্রদান হয় খুবই কম।
সমাজ বিজ্ঞানী “এমিল ডুরমিখ” পরিবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, “পরিবার হচ্ছে একটি মানবিক সংগঠন, যেখানে মানুষ তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ কওর থাকে।”
সমাজ বিজ্ঞানী সামনার ও কেলারের মতে- “পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন-যা কমপক্ষে দুই পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।”
একজন পুরুষ আর একজন নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে সন্তান-সন্তুতি জন্ম নেওয়ার পর এই ছোট্ট পরিবারটি একসময় বাবা-মা, ভাই বোন, চাচা-চাচি মিলে যৌথ পরিবারে রূপ লাভ করে।পরিবারকে বলা হয় “আত্মীক সম্পর্কের সূতিকাগার”। পরিবারের সবাইকে ঘিরেই গড়ে ওঠে স্নেহ মমতা, ভালোবাসা সৌহার্দ এবং পারস্পারিক সম্পর্ক। আদিম কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলা জুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই নাই। শহুরে ও গ্রামীণ জীবনে অনেক আগে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন ইতিহাস। বাংলাদেশে উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা।
বাংলাদেশের সমাজ বিজ্ঞানী নজরুল ইসলাম বলেন, “আধুনিক সামাজিক ব্যবস্থার প্রসার, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং সংখ্যানুপাতিক হারে জীবিকার তারতম্য ঘটতে থাকায় যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে”।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৮৪ সালে পারিবারিক সংকটগুলো নিরসনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। সাধারণ পরিষদ ১৯৮৯ সালে এক প্রস্তাবে ১৯৯৩ সালকে বিশ্ব পরিবার বর্ষ হিসেবে অনুমোদন করে এবং ১৫ মে’কে আন্তজার্তিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের দিকে ফিরে যাওয়ার সংস্কৃতি জোরদার করা এবং পরিবারগুলোর ভিত্তিকে শক্তিশালী করতেই দিবসটির সূচনা করা হয়। বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আমাদের দেশেও পারিবারিক কাঠামো মজবুত করতেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে পালন করা হচ্ছে।
এই দিনের মুল প্রতিপাদ্য পরিবারে স্বামী-স্ত্রী সহ সকলের ভূমিকা অধিকার হবে সমান, মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। কারণ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখাতে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানবাধিকার ও নারীদের অগ্রগতি পরিবার দ্বারা প্রভাবিত। রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নে পরিবারের ভূমিকা ও দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে বিশ্বের প্রতিটি পরিবারের বন্ধন দৃঢ় হোক এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাক এবং পৃথিবীর সকল পরিবার সুখী হোক এই প্রত্যাশায়।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন