এই লেখাটা যে চল্লিশ দিন ধরে লিখতে হবে তা কে জানত! এভাবে লিখলে ত এক সময় একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখা হয়ে যাবে অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নেদারল্যনডে নাজি অকুপেশনের সময় দুই বছর লুকিয়ে থাকা ছোট্ট আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরীর মতো।
শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমরা শিখি। জীবন আমাদেরকে একেক সময় একেক পরিস্তিতির সামনে এনে দাঁড় করায়, পরীক্ষার সম্মুখীন করে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হলো সময়, জীবন আমাদের কাছ থেকে সময়টা কেড়ে নেয় আর বিনিময়ে যা ফেরত দেয় তার নাম- অভিজ্ঞতা !
সময়ের কাজ যদি সময়ে না করি তবে তার খেসারত দিতে হয় তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে। ডা: মঈন উদ্দিন কে নিয়ে সময় টেলিভিশন একটি অনুষ্টান দেখছিলাম যেখানে সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত! আমি আশাকরি এই ঘটনার আপাদমস্তক ইনভেসটিগেশন করে যারা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করেছেন তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
সিলেট এম এ জি উসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আ.ফ.ম. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আইসিইউ তো ক্রিটিক্যাল পেশেন্টদের জন্য। সিলেটে আইসিইউ থাকা অবস্থায় একজন ডাক্তারকে, বা হোকনা কোনো একজন সাধারণ রোগীকে বা একটা ক্রিটিক্যাল পেশেন্টকে, এখানে ভর্তি করা হলো না। এটাই ব্যথা ও দুঃখ।’এখন আর দু:খ করে কি হবে-
“জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা,
মরণে কেন তারে দিতে এলে ফুল
মুখপানে যার কভু চাওনি ফিরে,
কেন তারি লাগি আঁখি অশ্রু সজল।”
(অনুপ ঘোষাল, শৈলেন দাশগুপ্ত )
বৈজ্ঞানিকদের মতে, শেখার ক্ষেত্রে মূলত মানুষের ৪টি ক্যাটাগরি আছে: দেখে শেখা, শুনে শেখা, লেখা ও পড়ার মাধ্যমে শেখা,আবার কিছু মানুষ শুনে, দেখে বা পড়ার চেয়ে হাতে কলমে কাজ করে সহজে শিখতে ও বুঝতে পারে। ইংরেজীতে এদের Kinaesthetic Learners বা Practical Learners বলা হয়। এ ধরণের শিক্ষায় রিসোর্স অপচয় করে শিখতে হয়। মনে করি আপনি যদি হাতে কলমে পেন্সিল দিয়ে আঁকা শিখেন তবে পেন্সিল, ইরেজার আর কাগজের অপচয় হবেই।
যে সকল রাষ্ট্র দেখে ও শুনে করোনা সম্বন্ধে যত দ্রুত শিখেছে তারা ততই সফল হয়েছে।আমরা সময় পেয়ে, দেখে ও শুনে শেখার সময়টা বাগাড়ম্বরে নষ্ট করে এবার হাতে কলমে শিখতে বাধ্য হইতেছি বিদায় আমাদের রিসোর্স যেমন ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, লোক প্রশাসন ও সাধারণ জনগনের লোকশান হবেই।
ইতালিও সমান ভুল করায় আজ এতোদিন ধরে এতো প্রাণহাণীর পরও এই মহামারী থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। আমেরিকাও সমান ভুলের মাশুল গুনছে। ইতালিতে আজ ৫২৫ জন মারা গেছেন, আজ আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৭৮৬ জন,মোট আক্রান্ত ১৬৮৯৪১ জন।
এখানে বাংলাদেশি প্রবাসিরা কাজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন কারণ অধিকাংশই রেস্টুরেন্ট কর্মি আর রেস্টুরেন্টগুলো আজ মাস দুয়েকের মতো বন্ধ, সরকারি সহায়তা অপর্যাপ্ত আর অনেকে পাবেনওনা, বাংলাদেশের রেমিটেনস আয়ের উপর এর বিরুপ প্রভাব পড়বে!
১৬/০৪/২০২০
মিলান, ইতালী।
তথ্যসূত্র – লা রিপাবলিকা, সময় টিভি, সিলেটের ডাক।