চীনে করোনা ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের নাগরিকেরা বাঁচার উপায় হিসেবে ঘরে থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন। চীনা এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে ইতালির প্রাতো শহরের ৫০ হাজার চীনা বংশোদ্ভূত নাগরিকের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির দেওয়া তথ্যমতে, ইতালিতে সর্বশেষ ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫২ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১২ হাজার ৪২৮ জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কোনো ঘটনায় ইতালিতে এত মানুষ মারা যায়নি। আর ইতালির প্রাতো শহরের ৫০ হাজার চীনা বংশোদ্ভূত মানুষের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
অবিশ্বাস্য এ ঘটনার কারণ হিসেবে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রাতোর চীনা বংশোদ্ভূত মানুষেরা চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে। এই শিক্ষা হলো, ঘর থেকে বের না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। গত জানুয়ারির শেষ দিকে প্রাতোর চীনা বংশোদ্ভূত লোকজন নিজেরাই লকডাউন করে ঘর থেকে বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এখানকার চীনারা কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
চীনারা অন্যদের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার কারণেই করোনাভাইরাস সেখানে বসবাসকারী অন্যদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লেও চীনাদের আক্রান্ত করতে পারেনি।
অথচ দুই মাস আগে যখন করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছিল তখন ইতালির প্রাতো শহরের চীনা বংশোদ্ভূত লোকজনের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এর সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সে সময় একে লজ্জাজনক বৈষম্য হিসেবে বর্ণনা করে।
প্রাতো শহরে শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেনজো বার্তি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ইতালীয়রা আশঙ্কা করেছিলাম, প্রাতোর চীনাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অথচ তারা ইতালীয়দের চেয়ে অনেক ভালো করেছে।’ তিনি বলেন, প্রাতোতে বাস করে এমন কোনো চীনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।
প্রাতোর জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ জাতিগত চীনা। বিরাট এই জনগোষ্ঠীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় ইতালিতে গড় সংক্রমণের হার কমিয়ে এনেছে, অন্যথায় তা আরও বাড়ত। চীনা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ফ্রান্সেসকো উহু বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ইতালির অনেক ব্যবসায়ীকে তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য অনুরোধ জানালে তাঁরা এমনভাবে তাকিয়েছিলেন যেন মিথ্যা বলছি। কেউ তখন বিশ্বাস করেননি মহামারি এভাবে সংক্রমণ ঘটাবে।
চীনা ব্যবসায়ী লুকা ঝু গত ৪ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে ইতালির প্রাতো শহরে ফেরেন। বাসায় ফিরেই স্ত্রী ও সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কোয়ারেন্টিনে থাকেন ১৪ দিন।
চীনারা এ সময় কোনো রেস্টুরেন্টে যায়নি, যায়নি কোনো বার বা ক্লাবে। এ সময় তারা ঘরে থেকেছে। নিজেদের অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক রেখেছে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার আগে মাস্ক, গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েই বের হয়েছে। অনেক ইতালীয়কে তারা এভাবে সুরক্ষা নিয়ে বের হতে বললে তারা বরং চীনাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে।
চীনাদের এমন আচরণের বিরুদ্ধে ইতালীয়রা শহরের কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ পর্যন্ত করেছে। তবে বিষয়টি যখন ইতালীয় কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে পেরেছে, তখন সময় চলে গেছে। ভয়াবহ ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।