স্পোর্টস ডেস্ক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) রয়েছে খেলাধুলার এক গৌরবোজ্জ্বল অতীত। আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য লাভ করে আসছে।
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফুটবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, টেনিস, অ্যাথলেটিকস, (ছাত্রী) হ্যান্ডবল, ভলিবল ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় পর্যায়ক্রমে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা।
শারীরিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি অ্যাথলেট ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র সামসুদ্দিন অলিম্পিক গেমস প্রতিযোগিতার মত বড় আসরে অংশগ্রহণ করেছেন। অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী শাহারিয়ার সুলতানা সুচী, কাজল দত্ত, তাছলিমা আক্তার, লোক প্রশাসন বিভাগের আসাদুর রহমান, কাজল দত্ত, অপরূপ কুমার বৈদ্য, বাংলা বিভাগের মেহেদী হাসান উজ্জল, আইন বিভাগের এমদাদুল হক মিলন, ফাহিমা খাতুন, তাছলিমা আক্তার, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সোহেল রানা, মোল্লা সাবিরা সুলতানা, আব্দুল্লাহ হেল কাফি, আতিউল হাসান সিকদার, খন্দকার সোহেল রানা, পাপিয়া রাণী সরকার যথাক্রমে ভারোত্তোলন, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইবির খেলাধুলার সাফল্য
আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয় নয়বার চ্যাম্পিয়ন, তিনবার রানার্স আপ ও দুইবার তৃতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় ইবি ফুটবল টিম ২০১০, ২০১২ ও ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৬ সালে আঞ্চলিক পর্যায়ে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেদী হাসান উজ্জল জাতীয় যুব ফুটবল দলের দলনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও অরুপ কুমার বৈদ্য, আনোয়ার হোসেন, কামাল, আদনান চৌধুরী, রহিত সরকার, সাদ্দাম হোসেন, বিল্লাল মিয়া, জুলফিকার হায়দার, নুরুন্নবী মাসুম, ফয়সাল মারুফ, কবিরুল, রাতুল ইসলাম, মেহেদী হাসান রয়েল জাতীয় যুব ফুটবল দলের খেলোয়াড় হিসেবে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ইবি ২০১১, ২০১২ ও ২০১৪ সালে দ্বিতীয় স্থান এবং ২০১০ ও ২০১৩-এ তৃতীয় স্থান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র জয়ন্ত দাশ ২০১১ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের দলনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া আইন বিভাগের ছাত্র আশিকুল আলম ২০১১ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ দলের জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য।
আইন বিভাগের ছাত্রী ফাহিমা খাতুন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য। তিনি জাতীয় দলের হয়ে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে গত তিন বছর ধরে অংশগ্রহণ করছেন।
এছাড়া আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় টেনিস প্রতিযোগিতায় ইবি টেনিস টিম ২০১৩ সালে প্রথম ও ২০১৫তে তৃতীয় স্থান লাভ করে।
অ্যাথলেটিকসে ইবির সাফল্য
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ইবি টিম ২০১১, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ২০১০ ও ২০১৩ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান ইভা দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে দেশের দ্রুততম মানবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এবং ২০১১ সালে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তিনি ১৯টি স্বর্ণপদক অর্জন করায় ২০১৩ সালে রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এছাড়া পাপিয়া রাণী সরকার ২০১০, ২০১২ ও ২০১৫ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় দশটি স্বর্ণ ও তিনটি রৌপ্য পদক লাভ করেন। তিনি ২০১০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমস ও তুরস্কে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইনডোর গেমসে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
আইন বিভাগের ছাত্রী তাসলিমা আক্তার মনি ২০১১ ও ২০১৪ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় লং জাম্পে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ও একই বিভাগের ছাত্র ফিরোজ হোসেন কোরিয়ায় গোয়াংজুতে অনুষ্ঠিত ওয়াল্ড ইউনির্ভসিটি গেমসে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একই বিভাগের ছাত্র আশিক কুমার হালদার চীনে অনুষ্ঠিত দ্য সেকেন্ড এশিয়ান ইয়ুথ গেমস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এছাড়া অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী প্লাবনী হক জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা উচ্চলম্ফ ইভেন্টে ২০১৪, ২০১৫তে প্রথমস্থান ও ২০১৬তে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ভারতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
একই বিভাগের ছাত্রী জাফরিনা আক্তার ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হওয়া জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় শটপুট ও ডিসকাস থ্রো প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
অর্থনীতি বিভাগের আশিকুর রহমান খান এবং ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র আলিমুজ্জামান কানন ২০১২ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-২১ এশিয়ান হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা ও ২০১৪ সালে চীনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতায় ইইই বিভাগের ছাত্র সালভি বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন। আইসিটি বিভাগের ছাত্র সাজিদুল ইসলাম সৌরভ ২০১৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত আইএইচএফ ট্রফি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া আইন বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান বাঁধন থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান যুব জুডো প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে ২০১৮ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে ইবির ছয়জন এ্যাথলেট বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সদ্য সমাপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস্-২০২০’ এ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে কয়েকটি স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। ‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্প-২০১৯’ এ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সর্বমোট ৫৬ পয়েন্ট পেয়ে দলগতভাবে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং উক্ত প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী আনিকা রহমান তামান্না ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
‘বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস চ্যাম্প -২০২০’ এ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন এবং পদক অর্জন করেন। তবে প্রতিযোগিতাটি কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরে সর্বশেষ নেপালে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় ফুটবল সিরিজে আইন বিভাগের ছাত্র মেহেদী হাসান রয়েল জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. মোঃ সোহেল বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, ছাত্রসংখ্যা, ক্রীড়া বাজেট, ক্রীড়া অবকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা সমস্যা থাকার পরেও জাতীয়, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইবির সাফল্য ঈর্ষণীয়। আমাদের এই মুহুর্তে একটি ক্রীড়া বিভাগ খোলা উচিত। তাহলে বিকেএসপিসহ বিভিন্ন জায়গার ভালো খেলোয়াড় পাবো। ফলে খেলোয়াড় শিক্ষার্থী সঙ্কট দূর হবে এবং এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমরা দুই-এক বছরের মধ্যে একটি স্পোর্টস বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আস্তে আস্তে ইনস্টিটিউটের দিকে ধাবিত হবো। ফলে ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সফলতা ধরে রেখেছে তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। ক্রীড়াঙ্গন এখন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এ খাতে অবদান রাখতে চায়।’