বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
এখন কিছুটা ভালো আছেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। শুক্রবার রাতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কলকাতার ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন তিনি। গভীর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ রয়েছেন। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে অসুস্থতা গভীর আকার নেয়। দ্রুত শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। শ্বাসকষ্ট অত্যধিক হলে তাঁর পরিবার কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর শরীর পরীক্ষা করে সেখানেই তাঁকে ভর্তি করে নেন। তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করার পর চিকিৎসকরা তাঁর শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করেন। এক্সরে, সিটি স্ক্যান–সহ কোভিড পরীক্ষাও করা হয়। শনিবার তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে কিছুটা স্বস্তি পান চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কারণ, তাঁর শ্বাসকষ্ট চরমে ওঠায় তিনি কোভিড সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করেছিলেন চিকিৎসকরা।
সাহিত্যিকের বয়স এখন ৭৯। তাই তাঁর শরীর নিয়ে সকলের মধ্যে উদ্বেগ একটা ছিলই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শ্বাসনালীতেও গভীর সংক্রমণ রয়েছে। তবে শুক্রবার রাতের তুলনায় এখন তিনি কিছুটা ভালো আছেন। উল্লেখ্য, গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তিনি সিওপিডি–র সমস্যায় ভুগছেন। মাস কয়েক আগেও মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তাঁকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়েছিল। তার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতি বাংলার সাহিত্য জগৎকেও আঘাত করেছে। কিছুদিন আগেই দিল্লিতে গিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ। বয়সের কারণে তাঁর শরীর নিয়ে তখন উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল সাহিত্য মহলে। তবে সুখবর হল, তিনি করোনা–মুক্ত হয়ে এখন দিল্লিতেই রয়েছেন।
সমরেশ মজুমদারের বহু উপন্যাস–গল্প বাঙালি পাঠককে এখনও মুগ্ধ করে রেখেছে। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’। এর পর একে একে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ–এর মতো উপন্যাস অগণিত পাঠকের মন জয় করে নেয়। লেখার জগতে অনিমেষ, মাধবীলতা, অর্জুন, দীপাবলি, অর্কর মতো দুর্দান্ত চরিত্রের জনক তিনি। তাঁর লেখা কালবেলা, কালপুরুষ, উত্তরাধিকার উপন্যাস তিনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে গর্ভধারিনী, হরিণবাড়ি, ফেরারি, শ্রদ্ধাঞ্জলি, বুনো হাঁস, অনুপ্রবেশ।
১৯৮২ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে ‘কলিকাতায় নবকুমার’ উপন্যাসের জন্য পান বঙ্কিম পুরস্কার। রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান দেয়। পেয়েছেন আইআইএমএস পুরস্কারও।