[pl_row]
[pl_col col=12]
[pl_text]
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সারা দুনিয়া জুড়েই দেখা যাচ্ছে এই দৃশ্য– করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লোকদের শেষকৃত্য হচ্ছে, কিন্তু তাদের মৃতদেহের পাশে প্রিয়জনদের কেউ নেই শোক প্রকাশের জন্য।
এসব দৃশ্য দেখে মানুষের মনে ভয় ছড়িয়ে পড়ছে। তার কারণ শুধু মৃত্যুভয় নয়, মৃতের প্রতিও একটা ভয়।
কোভিড-১৯এ কেউ মারা যাওয়ার পর সেই মৃতদেহ থেকে কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে? করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে কি জীবিতরা সংক্রমিত হতে পারেন? তার শেষকৃত্য করাটা কি নিরাপদ? তাছাড়া, করোনাভাইরাসে মৃত ব্যক্তিকে কি কবর দেয়া উচিত? নাকি দাহ করা উচিত?
এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মনে।
এখন পর্যন্ত জানা তথ্য থেকে এরই উত্তর এ রিপোর্টে।
মৃতদেহ কি কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়াতে পারে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে মৃতদেহ থেকে কোভিড-১৯ ছড়ানোর কোন ভয় নেই।
এই সার্স-কোভ-টু ভাইরাস প্রধানত: ছড়ায় মানুষের নাকমুখ থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরল কণার মাধ্যমে – যাকে বলে ড্রপলেটস। মানুষ যখন কথা বলে এবং হাঁচি বা কাশি দেয় – তখনই এই ড্রপলেট ছিটকে বের হয়।
তবে এই ভাইরাস কিছু কিছু জায়গায় বা সারফেসের ওপর কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
প্যান-আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের (পাহো-হু) মুখপাত্র উইলিয়াম আডু-ক্রো এ মাসেই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “মৃতদেহ থেকে জীবিত মানুষের দেহে এই সংক্রমণ ছড়ানোর কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। “
মৃতদেহের মধ্যে কি এ ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে?
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “একথা বলার অর্থ এই নয় যে আমরা মৃতদেহকে সংক্রামক নয় বলছি বলেই আপনি মৃত ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসার কারণে তাকে চুমু খাবেন বা এরকম কিছু করবেন। এর পরও আমাদের নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
মার্চ মাসে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে বলা হয়, ইবোলা বা মারবুর্গের মতো অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এমন জ্বর বা কলেরা ছাড়া অন্য মৃতদেহ সাধারণত: সংক্রামক নয়।
এতে বলা হয়, “শুধুমাত্র ময়না তদন্তের সময় যদি মহামারি ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত ব্যক্তির ফুসফুস অসতর্কভাবে স্পর্শ করা হয় – তাহলে তা সংক্রামক হতে পারে। তা ছাড়া সাধারণত মৃতদেহ রোগ ছড়াতে পারে না।
কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের রোগে মারা যাওয়া মানুষের ফুসফুস বা অন্যান্য প্রত্যঙ্গে জীবন্ত ভাইরাস থাকতে পারে। এ ভাইরাস অটোপ্সি বা ব্যবচ্ছেদের সময় চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে, বা মৃতদেহের অভ্যন্তরভাগ পরিষ্কার করার সময় বেরিয়ে আসতে পারে।
কোভিড-১৯এ মারা যাওয়া ব্যক্তির আত্মীয় বা নিকটজনদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রশিক্ষিত এবং সুরক্ষা পোশাক পরা পেশাদার কর্মীরা মৃতদেহটিকে শেষকৃত্যের জন্য তৈরি করে দেন।
কোভিড-১৯এ মৃত ব্যক্তিদের কি শেষকৃত্য হতে পারে?
কোন কোন দেশে কোভিড-১৯এ মৃতের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে শেষকৃত্যানুষ্ঠান আয়োজকদের সংকটে পড়তে হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কিছু কিছু দেশ শেষকৃত্য নিষিদ্ধ করেছে।
কিছু দেশ শেষকৃত্যে আগত লোকের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত করে দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কিছু বিধিনিষেধ মেনে স্বজনরা শেষকৃত্যের সময় মৃতদেহ দেখতে পারেন। তবে কেউ যেন মৃতদেহ স্পর্শ বা চুম্বন না করেন, এবং উপস্থিত সবাইকে অন্তত ১ মিটার দূরে দূরে থাকার নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, আর মৃতদেহ দেখার পর পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ আছে এমন কারো শেষকৃত্যে যোগ দেয়া উচিত হবে না, অথবা তাদের অন্তত ফেস মাস্ক পরা উচিত যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়।
বলা হয়, শিশু বা ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক প্রাপ্ত বয়স্ক, অথবা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে – এমন কারো মৃতদেহের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কোন কাজে অংশ নেয়া উচিত নয়।
কোভিড-১৯ আক্রান্তের মৃতদেহ কি কবর দেয়া যায়, নাকি তাদের দাহ করতে হয়?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোভিড-১৯এ মৃত ব্যক্তিদের কবর দেয়া বা দাহ করা – দুটোই গ্রহণযোগ্য।
তারা বলছে, সংক্রামক রোগে কারো মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলতে হয় – এরকম একটা কাল্পনিক ধারণা অনেকের মধ্যেই আছে। কিন্তু এটা সত্য নয়। মৃতদেহের সৎকার কীভাবে হবে তা নির্ভর করে সাংস্কৃতিক বিবেচনা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে কি না – তার ওপর।
যারা কবরে নামানো বা এমন কোন কাজে মৃতদেহ স্পর্শ করবেন, তাদের উচিত গ্লাভস পরা। কাজ শেষ হবার পর সেই গ্লাভস যথাস্থানে ফেলতে হবে এবং আগে-পরে হাত ধুতে হবে। এসব কাজে কোন তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলার কোন প্রয়োজন নেই। তবে এগুলো স্পর্শ করার আগে গ্লাভস পরতে হবে, এবং ৭০% ইথানল দ্রবণ, ব্লিচ বা কাপড় ধোয়ার ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
মৃত ব্যক্তির কাপড়চোপড় ওয়াশিং মেশিনে ৬০ থেকে ৯০ ডিগ্রির মতো উচ্চ তাপমাত্রায় ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে।
অথবা এসব কাপড়চোপড় একটা বড় ড্রামে গরম পানি ও সাবানে ভিজিয়ে রাখতে হবে, নাড়ানোর জন্য কাঠি ব্যবহার করতে হবে এবং সেই পানি যেন চারদিকে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মৃতদেহের মর্যাদা রক্ষা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃত ব্যক্তির মর্যাদা, তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য সব সময় রক্ষা করতে হবে, এবং তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
কিন্তু পৃথিবীর অনেক জায়গায় যেভাবে করোনাভাইরাস আতংক ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এগুলো মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ছে।
দৈনিক প্রত্যয়/ আন্তর্জাতিক/ জাহিরুল মিলন
[/pl_text]
[/pl_col]
[/pl_row]