করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক নারী। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনা নিয়ে রোগীর চিকিৎসক ডা. জাহানারা শিখা ফেসবুকে এক পোস্টে বিষয়টি জানিয়েছেন। আবেগঘন ওই পোস্টটি ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরালও হয়ে গেছে।
দৈনিক প্রত্যয়ের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
‘ডেথ সেন্টেন্স-ই মনে হচ্ছিল আজ। কাকডাকা ভোরের ফোন কলটাকে। তখন ভোর ৬টা। সিনিয়র কলিগ ফোন করেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে একজন রোগী রেফার্ড হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। করোনা সাসপেক্টেড লেবারের রোগী। সিজারিয়ান লাগবে। রোগীর চারদিন ধরে জ্বর, কাশি। যেহেতু এটা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল আর আমি আগামী সাতদিনের জন্য অনকল কনসালটেন্ট, আমাকেই যেতে হবে সিজার করতে। চরম দিশেহারা হয়ে কোনো রকমে ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে দৌঁড়ে এলাম হাসপাতালে। শুনলাম স্টাফ নার্সকে নিয়ে অপারেশন করতে হবে। কারণ সকল মেডিকেল অফিসার আইসোলেশন ওয়ার্ডের রোস্টার ডিউটি করছে। সিজারে এসিস্ট করার কেউ নেই।’
‘কম্পমান বুকে মনে মনে ছক কষছি আমি তখন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত সিজার শেষ করে আসতে হবে আমাকে। অপারেশনে সময় যত বেশি লাগবে তত বেশি এফেক্টেড হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, আমার আর আমার টিমের।
চশমা ছাড়া কিছু দেখি না আমি, তার ওপর পিপিইর গগলস, ফেস শিল্ড পরে চোখে আদৌ অপারেটিভ ফিল্ড দেখতে পাব কি-না, নার্সকে নিয়ে অপারেশন করে পনের-বিশ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করে আসতে পারব তো? অন্তরাত্মা ক্ষণিকের জন্য কেঁপে উঠল। এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় যখন আমার অবস্থা, তখন এগিয়ে এলেন আমার সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রিয় Shimul আপা।
বললেন, আমিও যাচ্ছি, চল। সাথে সাথে ভয় ডর উধাও হয়ে গেল। কলিজাটা এত্ত বড় হয়ে গেল আমার। অপারেশন শুরুর আগে রোগীকে এগজামিন করে মনে হলো, খুব খারাপভাবে বাসায় হ্যান্ডেল হওয়া অব্সট্রাকটেড লেবার। বাচ্চার হার্টবিট তখনও আছে। সিজার ডিফিকাল্ট হবে। আপা বললেন, খারাপ কেস, ঝামেলা হতে পারে। এদিকে ব্লাড লাগলে রোগীর লোক তা আনতে পারবে কি-না জানি না। কোনো পুরুষ লোকও সাথে দেখছি না। আপাকে বললাম, আপনি এক্সপোজড হবেন না, আপা! আপনি তো আছেন-ই। প্রয়োজনে হেল্প নেব আপনার। আমি সিস্টারকে নিয়ে শুরু করি।
কিন্তু আপা আমাকে এসিস্ট করতেই এগিয়ে এলেন। মহৎ হৃদয় আপার সহযোগিতায় দ্রুতগতিতে সিজার সেরে বেরিয়ে এলাম, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক ব্লিডিং হচ্ছিল একপর্যায়ে। সেটাও দুজনে মিলে দারুনভাবে ম্যানেজ করলাম। বাচ্চা, মা ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ।’
ডা. জাহানারা শিখা আরও উল্লেখ করেন, “আমরা আছি। মানুষের জন্য। মানুষের পাশে। একটু ভয় করে সত্যি। তবে ভয়টা নিজের জন্য নয়। বাচ্চাদের জন্য। মা ছাড়া আমাদের বাচ্চাদের আর কে আছে জগতে?
রোগীর স্যাম্পল কালেকশন করে নিয়ে গেছে। দোয়া করবেন সবাই, যাতে রোগীর কোভিড নেগেটিভ আসে। পজিটিভ হলে বাসায় যেতে পারব না ২১ দিন। বাচ্চাগুলোকে ‘যাই’ বলতেও পারিনি হাসপাতালে আসার সময়।”