করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবায় ভেঙ্গে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। করোনা ভাইরাসের দিনগুলোতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। করোনা ঠেকানোর লকডাউন অসহায় করে দিয়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষকে। বিশ্ব গণমাধ্যম সিএনএন বলছে ধ্বংসের মুখে পড়েছে বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকরা।
ফাতেমা আক্তার নামের ২৫ বছর বয়সী নারী এক পোশাক শ্রমিকের কর্ম হারানোর গল্প দিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওই প্রতিবেদন।
আলিফ ক’যাল ওয়ার গার্মেন্টস ফ্যাক্টোরিতে কাজ করতেন ফাতেমা। মার্চের শেষের দিকে তিনি যেদিন কাজে গিয়েছেন, তিনি জানতে পারেন সেদিনেই তার শেষ কর্ম দিবস। যা তার কল্পনাতেও ছিল না। ফাতেমা পাঁচ বছর যাবত কাজ করতো এ প্রতিষ্ঠানে। ফাতেমা বলেন, ‘আমাদের প্রধান লাইন ম্যান এসে আমাকে বললো আমি আর কাজ করতে পারবো না।’
তিনি বলেন, কম্পানি কোন মন্তব্য ছাড়াই কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কারণে মার্চ থেকেই তাকে কোন বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই চলে যেতে হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যঅকচারার্স এ্যন্ড এক্সপোর্টার এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে প্রায় ৪১ লক্ষ পোশাক শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। যা দেশের মোট পোশাক শ্রমিকের অর্ধেকেরও বেশি।
ফাতেমার মতো তাদের বেশির ভাগই নারী যারা প্রতি মাসে ১১০ মার্কিন ডলার আয় করে যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। আবার এটাই তাদের পরিবারের এক মাত্র উপার্জনের রাস্তা।
ফাতেমা তার স্বামী এবং বাচ্চার জন্য কাজ করেন জানিয়ে বলেন, ‘আমার পরিবার আমার একমাত্র আয়ে চলতো। আমি এখন জানি না কি করে আমার পরিবার চলবে।’
বিশ্বজুড়ে লকডাউন আর অভূতপূর্ব কর্ম হারানো মানুষের মধ্যে এমন কিছুর চাহিদা এসেছে যা কেবল খাদ্য কিংবা বস্ত্র নয়। যার ফলে বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের সস্তা শ্রমের উপর নির্ভরশীল আন্তর্জাতিক ব্রান্ড কিংবা পরিবেশকদের চুক্তি বাতিল করেছে। বিজিএমইএ বলছে, এ অর্থের পরিমাণ হবে অন্তত ৩.১৭ বিলিয়ন ডলার বা ৩১৭ কোটি।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলছেন, ‘এটি অসত্য ও অবাস্তব।’
তিনি আরও বলেন, দেশে খুব সামান্য আইনি আশ্রয় নেওয়া সুযোগ আছে যেটার মাধ্যমে বিশ্বের খুচরা বিক্রেতাদের চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করার দাবি করতে পারে কারখানাগুলো।
ড. রুবানা বলেন, ‘আমি কোন অনুদান চাই না, আমি কোনও ধরণের দাতব্য চাই না, আমি কেবল আমাদের কর্মীদের জন্য নূন্যতম ন্যায়বিচার চাই।’
বাংলাদেশের পোশাক কারখানা গুলো জিডিপিতে ১৬ শতাংশ অবদান রাখেছে। গত বছর রপ্তানির ৮০ শতাংশই পুরণ হয় দেশের তৈরি পোশাক দিয়ে। আর সে হিসেবে গতবছর ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার কোটি আয় করে।
সূত্র:সিএনএন।