বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
পশ্চিমবাংলায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় তৃণমূল সরকার। কড়া হাতে লকডাউন সফল করতে ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন পুলিশ কর্তারা। বড় বড় রাস্তাগুলিতে একটি গাড়ি যেতে পারে, এমন জায়গা রেখে বাকি অংশ ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। গলিগুলি প্রায় বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট গলিগুলির অধিকাংশই পুরোপুরি বন্ধ।
রাজ্যে করোনা আক্রান্তের দিক থেকে হাওড়া রেড স্টারের মধ্যে রয়েছে। কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। এ ছাড়াও আরও কিছু অঞ্চলকে চিহ্নিত করা হয়েছে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে। সেগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলির বেশ কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। যে অঞ্চলগুলিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেইসব এলাকা পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে রাজ্যের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। রবিবার তিনি জানান, স্পর্শকাতর এলাকাগুলির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
শনিবার থেকেই কলকাতা, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার হটস্পট এলাকাগুলিতে পুলিশ বেশ কড়া অবস্থান নেয়। অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপক ভাবে ধরপাকড় শুরু হয়। এর মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটেছে গড়িয়া এবং চারু মার্কেটে। কোনও কারণ ছাড়া রাস্তায় বের হওয়ায় কয়েকজনকে পাকড়াও করে রীতিমতো কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। রবিবার বহু এলাকায় টহল দেয় কমব্যাট ফোর্স। প্রতি জোনে ছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমান্ডোরা। এই জওয়ানরা রায়ট কন্টোলে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ফাইবারের লাঠি–ঢাল, সেমি অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে তারা রুটমার্চ করছে। কলকাতার রাস্তাগুলিতে প্রতি ডিভিশনে ৭ জন করে কমব্যাট ফোর্স নজরদারি চালাচ্ছে।
কমব্যাট ফোর্সের টহলদারিতে বেশ ফলও পাওয়া গিয়েছে। কলকাতার অধিকাংশ অঞ্চলই রবিবার দুপুরের পর থেকে প্রায় জনহীন হয়ে যায়। রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাওয়া গাড়ি এবং পুলিশ ছাড়া কাউকেই বিশেষ একটা দেখতে পাওয়া যায়নি। লকডাউন ভঙ্গ করার অভিযোগে রবিবার সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বেআইনি ভাবে শহরের রাস্তায় বের হওয়ায় ৫০টির মতো গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছে কলকাতা পুলিশ।
এ দিকে, এই আতঙ্কের মধ্যেই এসএসকেএমের এক রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসায় সেখানকার ১৪ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। রবিবার রাতে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২৪ জন। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১৯৮ জন। যদিও ভারত সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে পশ্চিমবাংলা সরকারের তথ্যের মধ্যে অনেক তফাত দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ৬৬ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন বলে রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে। রাজ্যে হোম অর্জারভেশনে রয়েছে ৩৫ হাজার ৮১ জন।