মুরাদ হাসান, রূপগঞ্জ : “সব কামাদের দোকান বন্ধ, নতুন কাছি বানামু কেমনে, আর পুরানগুলোই মেরামত করমু কেমনে আর ধানই বা কাটমু কিভাবে” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার কায়েতপাড়ার কৃষি শ্রমিক ঝানে আলম মিয়া। উপজেলার কামসাইর এলাকার কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, করোনায় সব কিছুই তো বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাছি টাকি না বানাতে পারলে ধান কাটবে কিভাবে। সকল কামারশালা যেমন বন্ধ রয়েছে, তেমনি ধান কাটার শ্রমিকেরও সঙ্কট রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় বাহিরের শ্রমিকরা আসতে পারছে না। কিভাবে যে ধান ঘরে তুলব সে চিন্তাই অস্থির আমরা। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ২৫ দিন ধরে দোকানপাট বন্ধ। চলছে লকডাউনও। কৃষিশ্রমিকেরা ঘরবন্দী। দোকান বন্ধ থাকায় চাষিরা সার ও কীটনাশক কিনে বোরো খেতে ছিটাতে পারছেন না। শ্রমিকের অভাবে খেতে সেচও বন্ধ। এসব কারণে এ মৌসুমে বোরোর প্রত্যাশিত উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। আসছে বৈশাখ মাস। পাকতে শুরু করেছে বোরো ধান। সঙ্কটে রয়েছেন কৃষকরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বন্ধ দোকানপাঠের তালিকায় রূপগঞ্জের কামারশালাগুলোও রয়েছে। এতে দাওয়া-মাড়াই উপকরণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক শ্রমিকগন। স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে রূপগঞ্জের কৃষকরা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলাটিতে মোট ফসলী জমি ৩৫ হাজার ৪৮০ একর। প্রধান ফসল বোরো আবাদ হয় ১৪ হাজার ২শ একরে। আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতায় চাষাবাদ থেকে শুরু করে দাওয়া-মাড়াই পর্যন্ত এ অঞ্চলের কৃষক শ্রমিকগণ মধ্যযুগীয় যন্ত্রপাতি নির্ভর। কাস্তের মতো সাধারণ কিন্তু অতীব প্রয়োজনীয় এসব সামগ্রির প্রধান উৎস কামারশালা। মেরামত বা কাজের উপযোগি করতেও একমাত্র সমাধান কামারশালা। কৃষি শ্রমিক রূপগঞ্জ সদরের মশুরু গ্রামের নুরু মিয়া জানান, জমি কাটায় যাইবো ক্যামনে, কাঁচি (কাস্তে) তো পাইতাছি না। কামারের দোকান বন্ধ। হাট বাজারও বন্ধ। ঘরে যেইটা আছে হেইডারেও মেরামত করার ব্যবস্থা নাই।ইছাখালী মাড়াই কল মালিক হানিফ মিয়া বলেন, এক বছর যাবৎ মাড়াইকলডা পরা। দাঁতমাত ভোঁতা অইয়া রইছে। কিছু কামকাজ না করাইলে কল লইয়া মাঠে গেলে কি অইবো। কামার আর ওয়ার্কসপ বন্ধ। ঠিক করানির লাইগ্যা দৌড়তাছি। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া এলাকার রমন কর্মকার বলেন, যারা দোকান খুলে তাদেরকেই জরিমানা করে। গরীব মানুষ আমরা। দিন আনি দিন খাই। দোকান বন্ধ। যে অবস্থা চলতাছে ভাই, ঘরের খাওনই তো নাই। জরিমানা দিবাম ক্যামনে। রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, জরুরি কোন কিছু বন্ধ নয়। তবে কৃষি উপকরণ সামগ্রির দোকান খোলা যাবে কি না তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের সাথে কথা বলে জানাবো। এব্যাপাওে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজা বেগম মম বলেন, যেহেতু এখন ধান কাটার মৌসুম, তাই লোক সমাগম না ঘটিয়ে স্বল্প পরিসরে কামারশালা চালু রাখা যাবে। তারিখ ঃ ১৫.০৪.২০ ইং মুরাদ হাসান রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।