ওয়েব ডেস্ক রিপোর্টঃ জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অবস্থিত মসজিদ দারুস সালামে প্রথমবারের মতো উচ্চৈঃস্বরে মিনার থেকে আজান দেওয়া হয়। গত শুক্রবার দুপুরের জুমার আজান থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম। জার্মানিসহ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির প্রতি সংহতি জানিয়ে মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর আত্মিক প্রশান্তি তৈরি করতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগে থেকে জার্মানিতে শুধু মসজিদের ভেতরই আজানের কার্যক্রম অনুমোদিত ছিল। বাইরের মিনার থেকে উচ্চৈঃস্বরে আজান দেওয়া নিষিদ্ধ।
দারুস সালাম মসজিদ কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে নিউক্লোনে অবস্থিত গ্যালিলি চার্চের ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে মিলিয়ে মসজিদে আজানের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বার্লিনের স্থানীয় সময় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় এবং প্রতি শুক্রবার জুমার সময় করোনার সংকটের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত আজান দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত হবে। মূলত খ্রিস্টানদের সন্ধ্যায় চার্চের ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে মিলিয়ে মসজিদের মাগরিবের আজানকে উঁচু আওয়াজে দেওয়া হবে। দারুস সালাম মসজিদের ইমাম মুহাম্মাদ ইবরাহিম সাবরি বর্ণনা করেন, ‘উদ্যোগটি এমন সময়ে গ্রহণ করা হয়েছে, যখন করোনা মহামারির কারণে আমরা এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। মসজিদ, গির্জা, বাজার—সব কিছুই এখন বন্ধ। এমন সময়ে সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গির্জার পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগের বার্তা প্রেরণ করা হয়, যার মাধ্যমে আমরা ধর্মীয় দিক থেকে বার্লিনের অধিবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে পারি। তাই আমরা মানুষকে ইবাদতের প্রতি মনোনিবেশ করতে ও মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বাসী মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সমন্বিত করতে সচেষ্ট হয়েছি। আমরা আশাবাদী যে এই উদ্যোগ সবার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে, যা আমরা মদিনায় প্রত্যক্ষ করেছি। কারণ আজান শোনার আগ্রহ সবার অন্তরে তৈরি করবে প্রশান্তির আবেশ ও স্রষ্টার প্রতি আস্থা।’
তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারির কারণে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, ফলে সবাই একে অপরের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করেছে। বিশেষত যারা এর আগে অন্যদের গ্রহণ করত না তাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জার্মানিতে অমুসলিমদের অনেকেই জার্মান ভাষায় আজানের শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত। তারাও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নেবে। এতে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি ও প্রত্যেকের সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা ও হৃদ্যতা তৈরি হবে।’
জার্মানিতে মুসলিম সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য সিদ্দিক মুশোলি বলেন, জার্মান ও ইউরোপের অনেক মসজিদে আজানের ধ্বনি উচ্চৈঃস্বরে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সব মানুষের একে অপরের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিল বিধিমালার কারণে এর সাফল্য ছিল সুদূরপরাহত।
তিনি আরো বলেন, ইউরোপজুড়ে বসবাস করা বিশাল মুসলিম ইউনিটিকে করোনা মহামারির সময়ে মানসিক প্রশান্তি দিতে কর্তৃপক্ষ আজানের অনুমোদন দিয়েছে। তা ছাড়া ইউরোপের টিভিগুলোতে আজান ও শুক্রবারের খুতবা সম্প্রচারেরও সম্ভাবনা আছে। তবে তিনি এ কথাও বলেন, অনেকে উচ্চৈঃস্বরে প্রকাশ্যে আজানকে অনেক বড় বিজয় হিসেবে মনে করছে। তাদের বাস্তবতার সঙ্গে চলা উচিত। এটি শুধু সংকটকালীন একটি পদক্ষেপমাত্র। যদিও অনেকে মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই আজানের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
যদিও আজানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ কোনো কিছু বলেনি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডানপন্থী কট্টরপন্থীদের অনেকে এটিকে ‘করোনার অস্থির সময়ে মুসলিমদের সুযোগ গ্রহণ’ বলে সমালোচনা করেছে।
সুপ্রিম মুসলিম কমিউনিটির ভাষ্যমতে আজানের বিষয় শুধু বার্লিনেই প্রথম নয়, বরং ডিসবার্গসহ জার্মানির অন্যান্য শহরের প্রায় ২০টি মসজিদ থেকেও আজানের শব্দ শোনা গেছে। তা ছাড়া ইউরোপের স্পেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসসহ বেশ কিছু দেশে আজান দেওয়া শুরু হয়েছে।
তথ্যসূত্র : আলজাজিরা।