বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশ মৃত্যু বাড়লেও দৃশ্যত মানুষ সচেতন হচ্ছে না,লকডাউন মানছে না। করোনার প্রার্দুভাব ঠেকাতে ঘরে থাকার নির্দেশনা মানছেন না অনেকেই। লকডাউন অমান্য করে ঘরে বাইরে বের হচ্ছেন নাগরিকরা।
নিজগৃহে অবস্থান না করে বরং প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা। কেউ পেটের দায়ের আবার কেউ কেউ বের হচ্ছেন বাজার বা আড্ডার জন্য। করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে সরকার দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মানুষকে ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। পৃথকভাবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু লকডাউন জোরদার না হওয়ায় ক্রমশ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, গত ৮ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ১৪৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু বরণ করেছে ৮৪জন। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বড় একটি অংশ হাসপাতালের চেয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৫০০ রোগী হাসপাতালে রয়েছেন। করোনার টেস্ট কম হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে কতজন মানুষ করোনায় আক্রান্ত তা বলাও মুশকিল। ফলে এই মূহুর্তে ঘরের বাইরে বের হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সচেতনতা এবং সতর্ক হওয়া জরুরি। প্রত্যেকের হোম কোয়ারেন্টাইন অথবা গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবে তার ঠিক উল্টো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে তাহলে সামনে খুবই খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। এপ্রিলের শেষ অথবা মে মাসে এই সংকট আরো ঘূনীভূত হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা সংক্রামনের প্রবল ঝুঁকির মধ্যে নগরীর বিভিন্নস্থানে হরহামেশাই মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত রাজধানীতে কিছুটা জনশূন্য থাকলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পূর্বের মতো স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে পাড়া-মহল্লা-অলিগলি এবং বাজারঘাটে। লকডাউন অমান্যকারীদের বড় একটি অংশ নিম্নবিত্ত মানুষ। ত্রাণ বা পেটের দায়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণও চাহিদার তুলনায় কম। ফলে অভাবের তাড়নায় রাস্তায় মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাচ্ছেন তারা।
নগরীর ৬০ ফিটে কথা হয় আব্দুল আহাদ নামের এক দিনমজুরের সাথে। তিনি বলেন, পেটে ক্ষুধা আছে বলে আমরা বাইরে। কাজকাম নেই, খাবারও নেই। ত্রাণ উপর সংসার চলছে। ত্রাণের জন্যই বাইরে। কেউ ত্রাণ দিলে হাড়ি চুলায় উঠে। ত্রাণ না পেলে অনাহারে থাকতে হয়। আগারগাঁও বিএনপির বস্তির সামনের রাস্তায় ৫ বছরের বাচ্চা দিয়ে হাটতে দেখা যায় মরিয়ম বেগমকে। তিনি বলেন, করোনার চেয়ে ক্ষুধার জ্বালা মেটানো জরুরি। খাবার না থাকলে ঘরে বসে কি করবো? ঘরে বসে থাকলে কি আমার সংসার চলবে।
আবার দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকায় একশ্রেণির মানুষ চা-সিগারেটের জন্য বাইরে বের হচ্ছেন। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় পূর্বের মতো বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলো রীতিমতো আড্ডা হচ্ছে। ফাঁকা রাস্তায় শিশুদের ক্রিকেট খেলতেও দেখা গেছে। কাঁচাবাজারে আগের মতো সমাগত ক্রেতারা। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তরকারি ভ্যান গাড়ি ঘিরে জটলা দেখা যায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বাজার করতে নারী-পুরুষদের ভিড়। তিন ফিটের সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে ক্রেতা-বিক্রেতা কেনা বেচা করছেন। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রামনের আশংকা থেকে যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্বটা হলো-নিজের বাসায় থাকা, ভিড়ে না যাওয়া, একজন আরেকজনকে স্পর্শ না করা।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ অন্যান্য দেশের মতো সরকার ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সকল অফিস-আদালত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কলকারাখানা, বাস-ট্রেন-লঞ্চ-বিমান বন্ধ করা হয়েছে। রেস্তোঁরা, ক্লাব, থিয়েটার, সিনেমা, বিনোদন কেন্দ্র, শপিং মল ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধ কেনার জন্য সীমিত চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। নাগরিকদের ঘরমুখো করতে পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু তারপরও পুরোপুরি নাগরিকদের ঘরমুখো করা যাচ্ছে না। লকডাউন অমান্য করার জন্য কঠিন খেসারত দিতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।