আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পৃথিবী থেকে একেবারে পুরোপুরি নির্মূল হবে না করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)। প্রতি বছর নতুন নতুন রূপে ফিরে আসবে প্রাণঘাতি এ রোগ। এমনটাই দাবি করেছেন চীনের গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের কিছু শীর্ষ গবেষক দাবি করেছেন, সংক্রমিত জায়গাগুলো থেকে এ ভাইরাস দূর হবে না কখনও। আর খারাপ সংবাদ হলো, বিপুল সংখ্যক উপসর্গহীন রোগীর কারণে প্রতি বছর এ ভাইরাস ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বেশ জোরালোভাবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস তার সমগোত্রের অন্য ভাইরাসগুলোর মতো নয়। ‘সার্স-কোভ-২’ এই ভাইরাসটি নিজস্ব গোত্রের ‘সার্স’ বা ‘মার্স’ ভাইরাসের তুলনায় পথ চলে ভিন্ন আঙ্গিকে। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে রোগটি সেখানেই সঞ্চালন বন্ধ করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে তা নয়, বরং এটি ছড়াতেই থাকে। আর উপসর্গহীন হওয়ার ফলে এই ভাইরাসটি শনাক্ত করাও কঠিন। তার উপর বিশ্বজুড়ে এখনও প্রশস্ত হয়নি এর পরীক্ষা। তাই উপসর্গহীন এই ভাইরাসটি একবার দীর্ঘ সংক্রমণের পথে হাঁটতে শুরু করলে তা সহজেই নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনার পথটি হবে অনেক দীর্ঘ।
এ বিষয়ে চীনের শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্যাথোজেন বায়োলজি ইনস্টিটিউট’র পরিচালক জিন কি জানিয়েছেন, এটির খুব সম্ভবত একটি মহামারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দীর্ঘকাল মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করবে। এক পর্যায়ে এটি একটি মৌসুমী রোগ হিসেবে জায়গা করে নেবে এবং মানুষের সঙ্গেই মানবদেহের মধ্যে টিকে থাকবে। এটি আসলে পুরোপুরি অদৃশ্য হওয়ার মতো নয়; বরং প্রতি বছরই কোনো না কোনোভাবে এর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
একই রকম কথা বলেছেন দেশটির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ড. অ্যান্টনি ফাউসি। তিনি জানিয়েছেন, আমরা হয়তো আর কখনোই স্বাভাবিক হতে পারবো না। আমরা যদি ভাইরাসটি সংক্রমণের আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে না পারি, তবে আমাদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। সেদিক থেকে যেভাবেই হোক আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ বিল ব্রায়ান জানিয়েছিলেন, সূর্যের আলো এবং আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে করোনা ভাইরাস দ্রুত গতিতে মারা যায়। এছাড়া অ্যালকোহল ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ভাইরাসটিকে মেরে ফেলবে।
তবে চীনের বিশেষজ্ঞরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই তত্ত্বটিও বাতিল করেছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, চীনা বিশেষজ্ঞরা এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনোও প্রমাণ খুঁজে পাননি।
এ বিষয়ে দেশটির পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ওয়াং গুয়িকিয়াং জানিয়েছেন, ভাইরাসটি তাপ সংবেদনশীল। তাই গ্রীষ্মের সময়ও ভাইরাসটি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
দৈনিক প্রত্যয়/ আন্তর্জাতিক/ জাহিরুল মিলন