বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
লকডাউন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না পশ্চিমবাংলায়। আর এ নিয়েই দিল্লি–কলকাতার সংঘাত চরমে।
এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় কেন্দ্রীয় সরকার। তাই পশ্চিমবাংলার কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়র পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা অনুযায়ী অধিকার প্রয়োগ করে সোমবার দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠায় কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সে কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠায় এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনও করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর পরই রাজ্য–কেন্দ্রের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।
কেন্দ্রের চিঠি পাওয়ার পরই রাজ্য সরকারের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে টুইট করে রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কী কারণে কেন্ত্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পরিষ্কার করে জানাতে হবে। না হলে ওই প্রতিনিধি দলকে রাজ্যে কাজ করতে দেওয়া হবে না। এক তরফা ভাবে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যের ফেডারেল স্ট্রাকচারকে আঘাত করতে চাইছে। শুধু তাই নয়, পরে প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠিও পাঠান তিনি। সেখানে লিখেছেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এটি। কী কারণে প্রতিনিধি দল পাঠানো হল, তা আগে রাজ্যকে ব্যাখ্যা করে জানানো উচিত ছিল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বাস্তব তথ্য নির্ভর নয়।’ এর পরই জানা যায়, এদিন দুপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তখনই তিনি প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করার আগেই রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় দলটি।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তারা পরিষ্কার জানিয়েছে, ‘পশ্চিমবাংলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর সঙ্গে রাজ্যের সার্বভৌমত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রতিনিধি দলটি কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেবে। সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে কেন্দ্র নানা পরামর্শ দেবে এবং সাহায্য করবে।’ এদিন সন্ধ্যায় রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাও সাংবাদিকদের জানান, ‘রাজ্যকে না জানিয়েই এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি রাজ্যকে আগে জানানো উচিত ছিল। রাজ্যকে না জানিয়েই বিএসএফ, এসএসবি–কে নিয়ে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে।’ উল্লেখ্য, এদিন দুপুরের একটু আগে কেন্দ্রের দুটি প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসে। একটি দল সরাসরি উত্তরবঙ্গে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। তবে দ্বিতীয় দলটি সন্ধ্যায় মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে নবান্নে যায়।
এই বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য বিজেপি। অভিনেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে রাজ্য সরকার। এখন রাজনীতি করার সময় নয়। কেন্দ্রীয় দল বাংলাকে সাহায্য করতে এসেছে। তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুন। মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না। স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করুন।’ যদিও এ ব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই সরকারেরই তীব্র সমালোচনা করেছে সিপিএম। এক ভিডিও বার্তায় প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘দুই সরকারেরই উচিত মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা। রাজনীতি পরে করবেন।’ সিপিএমের সুরে সুর মিলিয়ে কংগ্রেসও একই কথা বলেছে। কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য, কেউই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। এটা পরিষ্কার দুই সরকারের ইগোর লড়াই। ভয় হচ্ছে এই দুই রাজার লড়াইয়ে অসহায় মানুষের না প্রাণ যায়!’