গাজী তাহের লিটন: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার চরফ্যাশনের চার শ্রমিক। যাদের গত তিন দিনেও সন্ধান মেলেনি।স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে যোগাযোগ রাখলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।
জানাযায়, অগ্নিকান্ডের সময় এ চারজনই কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে তাদের পরিবার। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।সেদিন তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তাও জানে না নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বেঁচে আছেন কিনা তাও জানা নেই উপজেলা প্রশাসনের। তবে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টির সার্বিক খোঁজ-খবর নিচ্ছে।
চরফ্যাশনে নিখোঁজ তিন শ্রমিক হলেন- চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের আমিনাবাদ গ্রামের ফজুলের ছেলে হাসনাইন (১২), একই বাড়ির কবিরের ছেলে রাকিব (২৮), এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মান্নানের ছেলে নোমান এবং, চরফ্যাশনের ওমরপুরের গোলাম হোসেনের ছেলে মহিউদ্দিন।এর মধ্যে হাসনাইন এবং রাকিব সেমাই প্যাকেটজাতকরণের কাজ করতো। নিখোঁজ চারজনের মধ্যে দুই জন মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আল এমরান প্রিন্স জানান, রাকিব ও হাসনাইন মারা গেছে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা তখন (দুর্ঘটনার দিন) কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন।
এদিকে দুঘটনার পর থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছেলের কথা বার বার মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা। কেউ সন্তান কেউ বাবা হারিয়েছেন।
নিখোঁজ হাসনাইনের বাবা ফজলু জানান, তার ছেলে (হাসনাইন) ওই ফ্যাক্টরিতে কারিগর রাকিবের সহকারী হিসেবে চতুর্থ তলায় কাজ করতো। দুর্ঘটনার দিনও তারা কারখানায় অবস্থান করেছিলো।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফজলু বলেন, গত বুধবার ছেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়েছিলো। সে বলেছিলো (হাসনাইন) বাবা ছয়দিন পরেই বাড়িতে চলে আসবো। কিন্তু আমি তাকে (হাসনাইনকে) বলেছি লকডাউনের মধ্যে আসার দরকার নেই, তুমি তোমার মামার বাড়িতে থাকো। আমি সেখানে ফোন করে দেবো। এরপর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। আমার একমাত্র ছেলে। সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। ছেলে তো আর ফিরে এলো না। আমি এখন কি নিয়ে থাকবো। আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনের নাম-ঠিকানা পেয়েছি, তারা সবাই চরফ্যাশন উপজেলার বাসিন্দা এবং দুর্ঘটনা কবলিত কারখানার শ্রমিক ছিলেন। তবে তাদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা ঢাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’
এদিকে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। নিখোঁজদের স্বজনের আর্তচিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।