আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জন্মের শততম বর্ষে পা দিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। এ উপলক্ষে একদিন-দুদিন নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে জমকালো আয়োজন করেছে টানা ছয় যুগ ধরে ক্ষমতাসীন দলটি। তবে সেসব আয়োজনে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা ও ইতিহাস বিকৃতি ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তাতে থোড়াই কেয়ার সিসিপির। তারা তাদের মতো করেই ‘সাফল্য’ উদযাপন করে চলেছে।
বৃহস্পতিবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে রাখা ভাষণে দলীয় প্রধান এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেউ চীনকে দমিয়ে রাখতে চাইলে লোহার দেয়ালের সঙ্গে তার মাথা সজোরে ঠুকে দেয়া হবে।
এসময় আধুনিক চীন গঠনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা বর্ণনা করেন জিনপিং। তার মতে, চীনে উন্নয়নের কেন্দ্রে রয়েছে তার দল এবং এটিকে জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমরা কখনো কাউকে চীনকে দমন, নির্যাতন বা পরাধীন করতে দেব না।
এদিন সিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিয়ানানমেন স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দলবদ্ধভাবে যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন, ক্যানন স্যালুট ও দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়।
দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দলীয় সেন্সরের মুখে রয়েছে গণমাধ্যমগুলো। চীনের ইতিহাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বা অনুষ্ঠান সম্প্রচারে আগে সেটিকে বাধ্যতামূলকভাবে সিসিপির অনুমোদন নিতে হচ্ছে।
যেভাবে উদযাপন হচ্ছে সিসিপির শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর প্রায় ৭২ বছর আগে ক্ষমতালাভ করে দলটি। সেই থেকে একনাগাড়ে চীন শাসন করছেন কমিউনিস্ট নেতারা। চীন হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম একদলীয় শাসনের দেশ।
সিসিপির অধীনে চীনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে তাদের শাসনামলে ঘটে যাওয়া অনেক মাইলফলক ঘটনা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবার বেইজিংয়ের বার্ড নেস্ট স্টেডিয়ামে ‘দ্য গ্রেট জার্নি’ নামে এক শৈল্পিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অসংখ্য সেট-পিসের মাধ্যমে চীন ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস তুলে ধরেন পারফরমাররা।
তবে বর্ণাঢ্য সেই আয়োজনে সাংস্কৃতিক বিপ্লব দমন, ১৯৮৯ সালের তিয়ানানমেন স্কয়ার বিক্ষোভ, হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভের মতো উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর কোনো চিহ্ন ছিল না।
গত এপ্রিল থেকে চীনের সিনেমা হলগুলোতে সপ্তাহে অন্তত দুবার প্রোপাগান্ডা মুভি চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মুভিগুলোকে সেখানে ‘রেড ফিল্মস’ বলা হচ্ছে।
এছাড়া সিসিপির শতবর্ষ উপলক্ষে বছরজুড়ে ১০০টি টিভি ড্রামা সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চীনের অর্জন নিয়ে ১০০ জন র্যাপারের গাওয়া ‘১০০%’ নামে একটি গানও প্রকাশ করা হয়েছে।
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘রেড ট্যুরিজম’। এতে ট্রাভেল কোম্পানিগুলো ‘লাল অভিযাত্রী’দের জন্য ১০০টি নতুন রুট চালু করেছে।
অবশ্য চীনের সবাই এ ধরনের প্রোপাগান্ডায় সন্তুষ্ট, তা নয়।
বেইজিংয়ের এক বাসিন্দা বিবিসি চাইনিজকে বলেন, এখন রাতে টিভি অন করলেই দেখি কয়েক ডজন চ্যানেলে বিপ্লবী যুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠান চলছে।
তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন ‘এটি একটি দল ও দেশ গড়ার বিষয়’- তোমাদের আর কিছু আছে?