কানাডার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে এ তথ্য জানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক, এনবিআর, সিআইডি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ-এর কাছে অর্থপাচারকারীদের সুর্নিদিষ্ট তালিকা চাওয়া হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এ তথ্য দেয় দুদক। তবে পুরনো তথ্যে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে নতুন তথ্য চেয়েছেন আদালত। দেশের বাইরে অবৈধভাবে কে কোথায় বাড়ি করেছেন, টাকা পাচার করেছেন তা দুই মাসের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে।
আদালত আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘বিচার না হোক,পাচারকারীদের নামও কি জানা যাবে না?’
এরই ধারাবাহিকতায় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনা বাংলাদেশিদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। তবে কানাডায় অর্থপাচারকারীদের নিয়ে এখনও পরিষ্কার অবস্থানে যেতে পারেনি সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারকে কানাডার বেগমপাড়ায় অর্থপাচার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জানতে চায় দুদক।’
আদালতের দেয়া দুইমাস সময়ের মধ্যে ইতোমধ্যে পার হয়েছে এক মাসের অর্ধেক। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জোগাড় করতে পারেনি দুদক।
বেগমপাড়ায় অর্থ পাচারের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘এগুলো বিষয় আসলে আদালতের আদেশে আসে তো, আদালতের আদেশের কারণে আসে। আবার তথ্য এলে আদালতে যায়। এই আরকি…’
‘বেগমপাড়ার তথ্য কতদিনের মধ্যে জানতে পারবেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলোর তো আসলে কোনো টাইমফ্রেম থাকে না। কারণ যারা কাজ করবেন তাদের কী পরিমাণ সময় লাগবে সেটা তো তারা বুঝবেন। আমরা চাই সব সময় তাড়াতাড়ি হোক। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হোক। কিন্তু একটা প্রসেস করে তারা কতদিনের মধ্যে দিতে পারবেন সেটা এখান থেকে বলে দিলে হয় না।’
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে পুরনো তথ্য সংবলিত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন দুদকের আইনজীবি মো. খুরশীদ আলম খান।
প্রতিবেদন দেখে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘বিদেশে এত লোক টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের একজনের নামও পাননি!’
‘আমরা দেখতে চাই দুদক কয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আপনারা অন্ততপক্ষে এটা দেখান যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
নতুন বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে আদালত আদেশে বলেছেন, ‘যারা বিদেশে অর্থপাচার করেছে, তাদের কোন জায়গায় কী আছে, কোথায় বসবাস করছেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যন্য বিবাদী যারা আছে, তারা এই অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কি না বা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চাচ্ছি।’