নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর মহাখালী টি এন্ড টি মাঠের পাশে এরশাদ নগর থেকে বনানী ১নং রোড গেইট পর্যন্ত সড়কটি ভাঙারি ব্যবসা ও অবৈধভাবে গড়ে উঠা পিকআপ স্ট্যান্ডের দখলে। সড়ক দখল করে রাখা হয়েছে সারি সারি পিকআপ ও ভাঙারি মাল। রাস্তা সংকুচিত হয়ে পরায় মানুষ ও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় হাঁটতে গেলে গাড়ি গায়ে লাগিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা। প্রতিদিন এই সড়কে দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনাসহ নানান ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া উক্ত সড়কের দু’পাশে পিকআপ স্ট্যান্ড, গাড়ির গ্যারেজ ও ভাঙারি দোকানের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে আরও শতাধিক অবৈধ দোকানপাট। যার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চার্জ দেওয়ার গ্যারেজও রয়েছে। এসব দোকানের মালামাল সড়কেই ফেলে রাখতে দেখা যায়। পিকআপ, প্রাইভেটকার মেরামত ও ধোয়া মোছার কাজে সড়কের অর্ধেকাংশ বেদখল হয়ে আছে। এ ধরনের প্রকাশ্যে সড়কের ওপর দখল চললেও কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ছে না।
জানা গেছে, উক্ত সড়ক দখলের পেছনের মূল কারণ চাঁদাবাজি। এসব দোকান ও পিকআপের মালিকের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার ভাগ যায় স্থানীয় নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে।
স্থানীয়রা বলেন, যানজটের কারণে এই সড়কে চলাচল করা চরম ভোগান্তির। হাঁটতে গেলে গাড়ি গায়ে লাগিয়ে দেয়। বাচ্চাদের স্কুলে যেতে খুব সমস্যা হয়। অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ডটি থেকে স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন চাঁদা উঠায় বলে জানা যায়। এ বিষয়ে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা রহস্যজনক!
সরেজমিনে দেখা যায়, উক্ত সড়ক দখল নিয়ন্ত্রণ ও বিটিসিএল-এর সম্পত্তি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও চাঁদাবাজি করে।
এলাকার বাসিন্দারা জানায়, বিটিসিএল বা সিটি করপোরেশন এর বড় কোনো কর্মকর্তা যখন এখানে পরিদর্শনে আসেন তখন দু’তিন দিন আগে থেকেই রাস্তার দুই পাশের সব দোকানপাট, পিকআপ সরিয়ে ফাঁকা করে ফেলা হয়। পরিদর্শক চলে যাওয়ার পরের দিন আবার দখল হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই এলাকায় ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারি, সংঘর্ষের ঘটনা লেগেই থাকে। গত ৯ মে, এরশাদ নগর এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী মিজানের মাথায় এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে তার প্রতিপক্ষরা। স্থানীয়রা জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার মাথায় ১১টি সেলাই দেওয়া লাগে। পরে এই ঘটনায় বনানী থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মিজানের স্ত্রী রাশিদা খাতুন।
এছাড়া চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর একজন করে খুন হয়। সর্বশেষ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গত ১৭ আগষ্ট এশার নামাজের সময় কড়াইল বস্তির নূরানী মসজিদের ভেতরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা আলামিনকে। এই ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় তাঁর ভাইসহ আরও কয়েকজন। হত্যার ঘটনায় বনানী থানায় ২২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আলামিনের মেজো ভাই মো. জুয়েল সরকার। এরমধ্যে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, বনানী থানা এলাকায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির মতো বড় কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে প্রসাশন নড়েচড়ে বসে। কয়েকদিন চোখে পড়ার মতো তৎপরতা থাকে তাদের। পরবর্তীতে কয়েকমাস পেরিয়ে গেলে সবকিছু আগের মতো হয়ে যায়।