নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারি করোনাতে বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে স্বাভাবিক গতি না ফিরলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনও ইতিবাচক রয়েছে বাংলাদেশের রফতানি আয়। করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে পোশাকের আমদানি ইতিবাচক হতে শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। করোনাকালীন চলতি বছরের প্রথম আট মাসের হিসাবে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানিকারক শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আট মাসের বিবেচনায় মার্কিন বাজারে নেতিবাচক রফতানি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, ভারতও।
গত আগস্ট মাস থেকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে হাঁটছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আগস্টে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৯ সালের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানি করে ৩৭০ কোটি ডলার; আর চলতি বছরের একই সময়ে তা নেমে আসে ৩০০ কোটি ৭৩ ডলারে। আর গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪২২ কোটি ৭৪ ডলার; চলতি বছর একই সময়ে এই আয় নেমে এসেছে ৩৬০ কোটি ৩৪ ডলারে। ২০১৯ সালের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রথম সাত মাসে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ পোশাক রফতানি থেকে যে পরিমাণ আয় করেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সেই আয় কমেছে ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কিন্তু আট মাসের হিসাবে এই ব্যবধান বেশ কমেছে। আগস্ট শেষে এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশে। অর্থাৎ আগস্টে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে।
একইভাবে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের হিসাবে ভিয়েতনামের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ; আট মাসের হিসাবে তা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। অর্থাৎ ভিয়েতনাম ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। একই সময়ের হিসাবে দেশটিতে ভারতীয় পোশাকের রফতানি আয়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কমে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ভারত ঘুরে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। চীনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ৪২ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশে। অর্থাৎ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পথে চীনের অগ্রগতি ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে শীর্ষে থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে থেকে ছিটকে গেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।
মাসভিত্তিক পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ যেমন এগিয়েছে, তেমনি এগিয়েছে মার্কিন পোশাকের বাজার দখলেও। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এক বছরে মার্কিন পোশাক বাজারের ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ দখলে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু আগস্টে এসে বেড়েছে দাপট। সবশেষ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরের হিসাবে মার্কিন পোশাকের বাজারের ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ এসেছে বাংলাদেশের দখলে। অর্থাৎ বাজার বেড়েছে দশমিক ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা (৮.১২ বিলিয়ন ডলার); যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে আয় ছিল ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। মার্কিন বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সামনে রয়েছে শুধু ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের বাজার বেড়েছে দশমিক ২৫ শতাংশ। ভারতের বাজার বেড়েছে দশমিক ০৯ শতাংশ।
একই সময়ে চীনের দখলে থাকা মার্কিন পোশাক বাজারের হিস্যা কমেছে দশমিক ৮১ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ। আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিকারক শীর্ষ পাঁচটি দেশ যথাক্রমে- চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। চীনের দখলে রয়েছে মার্কিন পোশাক বাজারের ২৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ভারতের ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, বাংলাদেশের ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার দখলে রয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।