বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
‘করোনা এক্সপ্রেসে চেপেই বাংলা থেকে বিদায় নেবে তৃণমূল।’ মঙ্গলবার ঠিক এই ভাষাতেই রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন অমিত শাহ। আর এ ভাবেই তিনি প্রথম ভার্চুয়াল সভাতেই আগামী বছরে হতে যাওয়া বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন। পরিষ্কার জানালেন, ২০২১ সালে বাংলার ক্ষমতায় আসছে বিজেপিই। শাহর পাল্টা সমালোচনায় সরব হয়ে ওঠেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, রাজ্যসভার দুই সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁরা বলেন, ‘অমিত শাহ নকল করতে ভালবাসেন। গোটা বক্তৃতায় সঠিক তথ্য দেননি তিনি। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে কেন্দ্র।’ অমিত মিত্র বলেন, ‘২০১৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার চালু করে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। আজ রাজ্যের ৭ কোটি মানুষ সেই সুবিধা পান।’
এদিন বেলা এগারোটার ভার্চুয়াল সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যে অবধারিত ভাবে উঠে এসেছে করোনা পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা। এই ইস্যুতে এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, এমনকী, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মুখেও উঠে এসেছে পরিযায়ী প্রসঙ্গ। তিনি এই শ্রমিকদের ফেরাতে মমতা সরকারের অনীহার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের ফেরাতে উত্তরপ্রদেশে ১ হাজার ৭০০টি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন গিয়েছে। বিহারে গিয়েছে দেড় হাজার ট্রেন। আর বাংলায় এসেছে মাত্র ২৩৭টি ট্রেন। কারণ, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই চাননি অন্য রাজ্যগুলিতে কাজ করা শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে আসুন। রাজ্য সরকারের বাধায় শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন সব থেকে কম এসেছে পশ্চিমবাংলায়।’ তার পর সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে কেন্দ্র যখন স্পেশ্যাল ট্রেন চালাচ্ছে, তখন সেই ট্রেনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা এক্সপ্রেস বলে উল্লেখ করেছেন।’
তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে কৃষক থেকে নাগরিকত্ব আইনও। কৃষক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষকে নিয়ে কেন রাজনীতি করছেন দিদি? আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি কৃষকদের নামের তালিকা দিন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী কৃষক কল্যাণ যোজনার টাকা পৌঁছে যাবে।’ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে অমিত শাহ জানান, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এক মিনিটের মধ্যেই আয়ুষ্মান প্রকল্প কার্যকর হবে। সব মানুষ তার সুবিধা পাবেন। সংশোধিত নাগরিক আইনের কথা টেনে তিনি বলেন, ‘সিএএ আইন আনা হয়েছে দেশের মানুষের নাগরিকত্ব সুনিশ্চিত করতে। তৃণমূল বড় ভুল করেছে সিএএ–র বিরোধিতা করে। এই বিরোধিতাই তাদের উদ্বাস্তু বানিয়ে ছাড়বে।’ এদিন তাঁর মুখে গুরুত্ব পায় দুর্নীতির প্রসঙ্গও। তৃণমূল সরকারকে চাঁছাছোলা ভাষা আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘গর্বের বাংলা, সোনার বাংলায় এখন শুধুই ভ্রষ্টাচার আর খুন–জখম, তোলাবাজির ঘটনা ঘটে। স্কুল–কলেজে ভর্তি হতে গেলেও টাকা দিতে হয়। একদিকে সিন্ডিকেট রাজের রমরমা, আর অন্যদিকে নতুন কিছু করতে গেলে ভাতিজা ট্যাক্স দিতে হয়।’ ভাতিজা বলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেন এদিন।
বিজেপির সভা–সমাবেশ হলেই পুলিশকে দিয়ে নানা অজুহাতে বকলমে তৃণমূল তা আটকে দেয় বলে এতদিন অভিযোগ করে এসেছেন দিলীপ ঘোষরা। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এদিন অমিত শাহ স্পষ্ট বলেন, ‘মমতা দিদি, এবার আর আমাদের সমাবেশের অনুমতি আটকাতে পারবেন না। হেলিকপ্টার নামাও আটকাতে পারবেন না। দেখে নেবেন এই নতুন প্রযুক্তির হাত ধরেই বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে বিজেপি।’ এদিকে, অমিত শাহর এই সভায় যাতে বিজেপি নেতা ও কর্মীরা যোগ দিতে না পারেন, সেইজন্য জলপাইগুড়ির বিভিন্ন ব্লকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজ্য সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল বিজেপি। জেলার মোহিতনগরে এই ঘটনা ঘটলেও বিজেপি নেতারা জেনারেটরের ব্যবস্থা করেন। তার পর সেই ভার্চুয়াল সভায় উপস্থিত থাকেন সাংসদ জয়ন্ত রায় এবং বিজেপির অন্য নেতারা। বাঁকুড়ায়ও একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলে বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান।