শেখ সাখাওয়াত হোসেন, পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি:
অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হেরেছে প্রতিবন্ধকতা। হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য স্থাপন করেছে অন্যান্য দৃষ্টান্ত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসহ শত বাধা পেরিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে চাঁদ বাবু নামের এক শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থী পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদ বাবু।
চার ভাই-বোনের মধ্যে বয়সে সবার বড় চাঁদ বাবু। ছোটবেলা থেকেই হাঁটু গেড়ে দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করে সে। তার দুই হাতের কবজিও বাঁকা। বাবা পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। দুই শতকের ওপর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই তাদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবার অল্প আয় দিয়ে কোনোমতে চলে ছয় জনের সংসার। অর্থাভাবে চিকিৎসা হয়নি তার। তবে শারীরিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি সে।
এ বছর পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমি থেকে এসএসসি (ভোকেশনাল) শাখায় কম্পিউটার ট্রেডে জিপিএ ৪.৭৫ পেয়ে পাস করেছে চাঁদ। চাঁদ বাবু ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুরের ছেলে। চাঁদ ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হতে চায়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে চাঁদ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পাস করে ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমিতে ভর্তি হয়। সেখানকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাঁদকে বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে। চাঁদ বাবু যেন নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারে তার জন্য প্রতিবেশীরা একটি হাতে চালানো চাকাওয়ালা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেয়।
তবে পরিবারের চরম অভাবের কারণে চাঁদকে অর্থ উপার্জনের দিকেও ছুটতে হয়। অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরেই সে গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ বিল তুলে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে মাসিক কিছু টাকা আয় করতে থাকে। সেই টাকা দিয়ে বই, খাতা-কলমসহ নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত চাঁদ।
চাঁদ বাবু বলে, ‘আমি ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হতে চাই। তবে আমাকে পড়াশোনা করানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই পরিবারের।’ পড়াশোনা করতে গেলে তো অর্থের প্রয়োজন হবে।
চাঁদ বাবুর পিতা আব্দুস সবুর বলেন, ‘ছেলে পড়াশোনা করতে চায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তার পড়াশোনার ইচ্ছাশক্তি প্রবল। কিন্তু আমার তো খরচ দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এখন কী করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে চাঁদের এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত। তার উচ্চ শিক্ষার জন্য ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।