কেন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হলো বত্রিশের বাসিন্দাদের?
ভবঘুরে সিজনাল পাগল নিতাইকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেঁড়ায়। কোন কোন দোকানে বসে আড্ডা দেয়। তবে কাউকে গালি দিতে বা কারো ক্ষতি করতে কখনো দেখিনি।
হাসি খুশি থাকে। অপরিচ্ছন্ন নোংরা হয়ে শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুড়ে বেড়ায়। কয়েকদিন আগে আখড়া বাজার অফিস থেকে নেমে দেখি দুরে রাস্তার ওপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। একদম স্বাভাবিক । মুখে মাস্ক না থাকাটাও প্রত্যাশিতই ছিল। আজ শোনলাম গেলো কয়দিন আগে নাকি অসুস্থতা নিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১৭ তারিখ সে মারা গেছে।
চিকিৎসকরা নাকি বলেছে সে স্ট্রোক করে মারা গেছে। যথারীতি লাশ পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করে দেয়। বিয়ে শাদী করেনি বেচারা। ভাই ভাতিজা আর এলাকার অন্তত ১৫/২০ জন মিলে হিন্দু রীতিতে বত্রিশ পৌর শ্বশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করে। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে ছোট বেলা থেকে চেনা জানা নিতাই মারা গেলো। তার শেষকৃত্য হলো অথচ আমি জানতেই পারলাম না। যেহেতু স্ট্রোক করে মারা গেছে তাই জানতে পারলে নির্ভয়ে তাকে শেষ দেখাটা দেখতে যেতাম। যেমনটা অন্য প্রতিবেশীরা করেছে। এটাইতো স্বাভাবিক।
কিন্তু অস্বাভাবিক বিষয়টা হলো নিতাই মারা যাওয়ার পর তার বডি স্বজনদের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ সন্দেহে তার মৃত শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল। তারপর নমুনা ঢাকা পাঠানো হয়েছিল এবং আজ সেই রিপোর্ট ঢাকা থেকে আসার পর জানা গেলো নিতাই কোভিড-১৯ পজেটিভ ছিল।
আমার প্রশ্নটা হচ্ছে যদি ১% সন্দেহের কারনে হলেও তার নমুনা আপনারা সংগ্রহ করলেন তবে তার বডি এভাবে কেন আপনারা তাদের হাতে তুলে দিলেন?
শেষকৃত্যে যাওয়া মানুষগুলো নিশ্চই স্ত্রী সন্তান পরিবার পরিজন নিয়ে তিন দিন ধরে সময় কাটাচ্ছে। বাইরে বের হচ্ছে। বাজারে যাচ্ছে। রাস্তায় হাটছে।
নমুনা নিলেন আর অস্বাভাবিকভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় এতগুলো মানুষের মাঝে বডিটা ছেড়ে দিলেন।
আমি বলবো এটা দায়িত্বে অবহেলা।
ইচ্ছাকৃতভাবে অগনিত মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো । সংক্রামন ঝুকিতে থাকা মানুষগুলো নিশ্চিতভাবেই আজ নির্ঘুম রাত কাটাবে।
শহরের শুধু বত্রিশ নয়
সেখান থেকে পুরো শহর ছড়াতে বেশীক্ষন লাগবে না। এটাও জানি এর দায় আপনারা কেউ নিবেন না।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু অযোগ্য মানুষের গাফিলতি আর অযোগ্যতার মাসুল গুনবে কিশোরগঞ্জবাসী
এ মাসুল গুনতেই হবে।
শেষ কথা হচ্ছে নিতাইয়ের মৃত্যুর আগে পরে তার কাছাকাছি থাকা সকল মানুষদের দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার ব্যাবস্থাটা অন্তত করুন।
পুরো শহরে করোনার আগুন ছড়াতে এমন একটা দুইটা নিতাইয়ের মত ঘটনাই যথেষ্ট।
বিজয় খোকা /Bijoy Khoka
২১ এপ্রিল/ রাত্র-৩ টা ৩৬