শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষীকোলা (মুন্সিপাড়া) গ্রামের সাত সন্তানের জননী বিধবা সুফিয়া বেগম (৭৫)। স্বামী মফিজ উদ্দিন মারা গেছেন ১৫ বছর পূর্বে। অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে চার ছেলে আর তিন মেয়েকে বড় করেছেন সুফিয়া। দিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের বিয়ে।এখন চার ছেলে-মেয়ে নিজ নিজ সংসারে ভালোই আছে। কিন্তু তাদের কারও সংসারেই বৃদ্ধা মায়ের ঠাঁই হয়নি। মাকে খেতে-পরতে দিতে চায় না কোনো সন্তান। গত এক বছর আগে তৃতীয় সন্তান শরিফুল ইসলাম গভীর রাতের অন্ধকারে মাকে বাড়ি থেকে মারধর করে বাঁশঝাড়ের নিচে রাস্তায় ফেলে রাখেন। দীর্ঘ এক বছর সেখানেই গ্রামবাসীর সহায়তায়
ছোট ছাপড়া করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এ বৃদ্ধা।ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বৃদ্ধা সুফিয়ার এমন জীবন-যাপন করার জন্য দায়ী ছেলেদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের বড় করেছেন সুফিয়া বেগম। এখন বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এখন তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়েদের কাছে বোঝা হয়ে গেছেন তিনি। চার ছেলের আলাদা সংসার থাকলেও কোনো ছেলেই তার দায়িত্ব নিতে চান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুফিয়া বেগমের বড় ছেলে রফিকুল বিএনপি নেতা। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে লড়েছেন। এক সন্তান সাইফুল দুবাই প্রবাসী। আরেক সন্তান শরিফুল মৎস ব্যবসায়ী। পুকুর চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করে সে। ছোট ছেলে সাজু মিয়া নিজেই অভাবী। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম অভিযোগ করেন, তার তৃতীয় সন্তান শরিফুল তাকে বেশি নির্যাতন করেছে। এমন অভিযোগ এলাকার অনেকেরই।
এলাকার অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শরিফুল এলাকায় মাছ ব্যবসার পাশাপাশি টাউট-বাটপারি করে। শরিফুল একাধিকবার তার মাকে মারধর করেছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকার লোকজন। দেউলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই প্রধান বলেন, অসহায় ওই বৃদ্ধা মাকে ফেলে দেবার কথা শুনে আমি বয়স্ক ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তার সন্তানরা স্বাবলম্বী হলেও মাকে এভাবে ফেলে রাখা অন্যায়। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার অন্য ছেলেরা কেউ কথা বলতে রাজি হয় না।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম বদিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নেয়া হবে এবং তার সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।