দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ বিজ্ঞান যৌবনে পদার্পণ করার বদৌলতে চন্দ্র সুর্য থেকে মাটির গভীর পর্যন্ত বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেয়েছে। তাই বিজ্ঞান মানতে বাধ্য হয়েছে ১৪০০ বছর আগে রোজার উপকারীতা পবিত্র কোরানের বর্ণনায় সত্য। মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য এই রমজানের রোজা পালন করাকে ফরজ করেছেন। বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে রোজার উপকারিতা গুলো আমাদের অজানা কিন্তু আধুনিকতার যুগে এগুলো জানা আমাদের কর্তব্য।
সূরা বাকারাহ’র ১৮৩তম আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার।”
রোজা হলো একটি অপ্রকাশ্য ইবাদত। আর নামাজ ও হজ্ব দৃশ্যমান ইবাদত। রোজা অপ্রকাশ্য ইবাদত বলে তা দিয়ে নিজকে জাহির করা বা লোক দেখানোর সম্ভাবনা নাই। রোজা মানুষের
ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। যারা একমাস ধরে দিনের বেলায় সব ধরনের খাদ্য-দ্রব্য ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে দূরে থাকে, তারা অন্যের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের লোভ- লালসাকে দমন করতে শিক্ষা লাভ করে। রোজা মানুষকে উদার হতে শেখায়। যারা একমাস ধরে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি করে তারা ক্ষুধার্তদের কষ্ট বুঝতে পারে এবং তাদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে সহানুভূতিশীল হয়। রোজা গুনাহ বা পাপ বর্জনের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বেশীরভাগ পাপ পেটপূজা ও ইন্দ্রিয় পরায়ণতা থেকেই জন্ম নেয়। রোজা এই দুই
প্রবৃত্তিকে দমনে রেখে সমাজে দুর্নীতি ও পাপ হ্রাস
করে এবং খোদাভীরুতা বা পরহেজগারিতা বাড়ায়।
সূরা বাকারাহ’র ১৮৪নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-
“রোজা নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য ফরজ।
তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় ওই সংখ্যক রোজা রাখতে হবে।
রোজা যাদের জন্য কষ্টদায়ক যেমন অতি বৃদ্ধদের জন্য, তারা অবশ্যই একজন অভাবগ্রস্তকে অন্নদান করবে।”
যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেশি সৎকাজ করে, তা তার জন্য বেশী কল্যাণকর হয়। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে, তবে বুঝতে রোজা রাখাই তোমাদের জন্য
বেশী কল্যাণকর। আল্লাহর বিধান কষ্টদায়ক কিংবা মানুষের সাধ্যাতীত নয়। বরং প্রত্যেকেই তারক্ষমতা-সাধ্য ও শক্তি অনুযায়ী আল্লাহর
বিধান পালন করতে পারে। যেমন সারা বছরের মধ্যে মাত্র এক মাস রোজা রাখা ফরজ। এই
মাসে কেউযদি সফরে বা অসুস্থ থাকে তাহলে তাকে অন্য কোন মাসে রোজা রাখতে হবে। আর যদি কোন মাসেইরোজা রাখার ক্ষমতা তার না থাকে তাহলে রোজা রেখে ক্ষুধা সহ্য করার বদলে ক্ষুধার্তকে স্মরণ করে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে প্রতিদিন একজন গরীবকে খাবার দিতে হবে অবশ্য এটা স্পষ্ট, রোজার কাফফারা দিতে গিয়ে কেউ যদি একজনের বেশী মানুষকে খাবার দেয়,
তাহলে তা বেশী কল্যাণকর।
সূরা বাকারাহ’র ১৮৫নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন-
“পবিত্র রমজান মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও
অসত্যের পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের
মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা রাখে। কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা ভ্রমেণে
থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ, তাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না। তাই
তোমরা রোজা রাখবে অর্থাৎ রোজার সংখ্যা পূরণ
করবে এবং নিজেদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা গাইবে ও
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।”
রমজান মাস রোজার চেয়েও যে জন্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এ মাসেই পবিত্র কোরআন
নাজিল হয়েছে। মূলত: রমজানের মর্যাদা ও গুরুত্ব
কোরআনের জন্যই। এই মাসে শবে ক্বদরের রাত্রিতেই নাজিল হয় পবিত্র কোরআন।
মাসের নাম গুলোর মধ্যে শুধু রমজান মাসের নামই কোরআনে স্থান পেয়েছে।
বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরির গবেষনা হতে দেখা যায় মানবদেহে ৩০% প্রোটিন সঠিকভাবে সংশ্লেষিত হতে পারে না। ফলে এদেরকে ধ্বংস বা শরীর থেকে অন্য উপায়ে কাজে লাগানো প্রয়োজন। যদি এই প্রোটিন গুলো সঠিকভাবে সংশ্লেষিত হতে না পারে তবে মানবদেহে নানা রোগ দেখা দিতে পারে আর এই প্রোটিনগুলো ধ্বংস বা কাজে লাগানো যায় এই রোজা রাখা তথা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে এবং এর ফলে মানবদেহে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজিত হতে পারে না। ফলে ক্যান্সার হতে রক্ষা পাওয়া যায়। সুতরাং, বলা যায় মহান আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এই আবশ্যিক বিধান মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।
লেখকঃ মোঃ আব্বাস আলী
সহযোগী অধ্যাপক, জিটি ডিগ্রী কলেজ, তালসার, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন