ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তিনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দুই ফরম্যাটেই পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে নিকটতম অন্য ব্যাটসম্যানের চেয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে পিছিয়ে মাত্র ৮ রানে, তবে খেলেছেন আবার ১০টি কম ম্যাচ। তর্কযোগ্যভাবে তিনিই দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা ওপেনার তো বটেই।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাঁহাতি ওপেনার ও বর্তমান ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের কথা। তার ঝুলিতে রয়েছে দেশের ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ড। সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ হাফসেঞ্চুরি, তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান- সব রেকর্ডই তার দখলে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ও স্ট্রাইকরেট বেশ প্রশ্নবিদ্ধই বলা চলে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত বছরখানেক বা তারও বেশি সময় ধরে খুব ধীর ব্যাটিং করছেন তামিম। দলের প্রয়োজন কিংবা চাহিদা মিটিয়েই এমনটা করছেন বলে বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন তিনি।
তবু আধুনিক ক্রিকেটে একজন ওপেনারের কাছ থেকে দ্রুত রানের আশাই থাকে সবার। যা সবশেষ তিনটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে করতে পারেননি তামিম। সবশেষ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ৯ ইনিংসে ৩২৪ রান নিয়ে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কিন্তু স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১১৫, যা সর্বোচ্চ পাঁচ রান সংগ্রাহকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এর আগে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলেছেন তিনটি ম্যাচ। যেখানে মাত্র ১২২ স্ট্রাইকরেটে তার সংগ্রহ ৮৩ রান। আর সবশেষ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের আসরে ১২ ম্যাচে ৩৯৬ রান নিয়ে তামিম ছিলেন সপ্তম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেই টুর্নামেন্টে তার স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১০৯; যা কি না আসরে অন্তত ১০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বনিম্ন।
শুধু তাই নয়, সবশেষ পাকিস্তান সফরের দুই টি-টোয়েন্টিতে তামিমের ব্যাটে রানের দেখা মিলেছিল ঠিকই। কিন্তু সেই রান করতে শুরুতেই অনেক বলও হজম করে ফেলেন তিনি। যার ফলে পড়তে হয় সমালোচকদের রোষানলে, কথা শুনতে হয় স্ট্রাইকরেট নিয়ে। এ বিষয়টি নিয়ে যেন ত্যক্ত-বিরক্তই হয়ে গেছেন তামিম। তাই স্ট্রাইকরেট বিষয়ক আলোচনাকে তিনি নাম দিয়েছেন নতুন ‘ট্রেন্ড’ তথা রীতি হিসেবে।
ভারতীয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে দেয়া সাক্ষাৎকারে অনেক কথার ভিড়ে প্রসঙ্গ আসে তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে। প্রশ্ন রাখা হয়, বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে আপনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবু ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের জন্য আপনার সমালোচনা করা হয়েছে। আপনার স্ট্রাইকরেট নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল…
এই প্রশ্নের উত্তরটা সরাসরি দেননি তামিম। তার মতে, স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন করা এখন একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। তামিম বলেন, ‘স্ট্রাইকরেটের ব্যাপারে প্রশ্ন করা এখন ট্রেন্ড (রীতি) হয়ে গেছে। আগামীকাল হয়তো আরেকটা নতুন ট্রেন্ড দাঁড়িয়ে যাবে। আপনি ১০ বছর পেছনে ফিরলে তখনও কোনো না কোনো ট্রেন্ড ঠিকই খুঁজে পাবেন।’
ট্রেন্ডের কিছু উদাহরণ দিয়ে তামিম আরও বলেন, ‘আগে যেমন ট্রেন্ড ছিল, কেউ বড় দলগুলোর বিপক্ষে ২-৩টা বড় ম্যাচ জেতালেও বারবার বলা হতো, সে তো রক্ষণাত্মক অধিনায়ক। এখন বর্তমানের ট্রেন্ড হলো, যেকোনো ব্যাটসম্যানকে তার স্ট্রাইকরেটের বিষয়ে প্রশ্ন করা।’
এসময় নিজের ব্যাটিং স্টাইল ও স্ট্রাইকরেটের বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, ‘দল যদি আমার স্ট্রাইকরেটের সুফল পায়, সেটা হোক ১১০ কিংবা ১৫০; তাতে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। যখনই আমার মনে হবে যে, আমি কিছু ভুল করেছি বা আমার কারণে দলের সমস্যা হয়েছে, তাহলে সবার আগে সেটা আমিই মেনে নিবো। কখনও এর পক্ষে যুক্তি দেবো না।’
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্লে-অফের প্রসঙ্গে এনে তামিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সেমিফাইনাল (এলিমিনেটর) ম্যাচে আমরা খুব ধীর শুরু করেছিলাম এবং শুরুতে দুইটা উইকেটও হারিয়েছিলাম। তবু আমার মনে হয় যে, আমরা কিছু ঝুঁকি নিতে পারতাম যেটা আমরা নেইনি। ম্যাচের পর আমি নিজ থেকেই স্বীকার করেছি যে, হ্যাঁ! আমরা ধীর খেলেছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘কিন্তু এমন অনেক সময়ও আছে, যখন আমার দলের চাওয়াই থাকে এমন (ধীর ব্যাটিং) খেলা। তবু আমাকে এসব প্রশ্নের (স্ট্রাইকরেট বিষয়ক) দিতে হয়। যা খুবই হতাশার। কারণ আমি কখনও এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অভ্যস্ত নই।’
তবে তামিম মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে অনেক উন্নতি করেছেন। যদিও ওয়ানডে-টেস্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে অর্জনটা তেমন বেশি নয় বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। তামিমের ভাষ্য, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমার মতে, আমার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমি মনে করি, ওয়ানডে ও টেস্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে সে অর্থে তেমন কিছু অর্জন করতে পারিনি।’