রাজধানীসহ সারাদেশে আজ (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে একযোগে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত টিকা নিতে আগ্রহী তিন লাখ ২৮ হাজার মানুষ সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
আজ সকাল ১০টায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি নিজেও টিকা নেবেন। এছাড়া দিনের বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রধান বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব টিকা নেবেন।
২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওইদিন প্রথম টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। প্রথম দফায় কয়েকশ’ মানুষকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়। আজ থেকে ‘গণটিকাদান’ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৫০টি এবং বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্য়ায়ে ৯৫৫টিসহ সর্বমোট ১ হাজার ৫টি সরকারি হাসপাতাল, মাতৃসদন ও ক্লিনিকে টিকা প্রদান করা হবে। টিকাদান করতে রাজধানী ঢাকায় ২০৪টি দলসহ সারাদেশে ২ হাজার ৪০০ দল কাজ করবে। প্রতি দলে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবীসহ থাকবেন ছয়জন সদস্য। প্রতি দলের টার্গেট দৈনিক ১৫০ জনকে টিকা দেয়া। সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা টিকাদানের প্রস্তুতি ‘এ’ মানের। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
প্রথম ধাপে যারা পাবেন :
প্রথম ধাপে ১৫ ক্যাটাগরির মানুষ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী, ৫৫ বছরের ওপরে বয়সী জনগোষ্ঠী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাকর্মী, ব্যাংক-বীমার কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপণকর্মী, এনজিওকর্মী, দাফন ও সৎকারকর্মী, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি।
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে স্বল্প সময়ে টিকা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। এই ব্যবস্থাটি শুধুমাত্র ৭ ফেব্রুয়ারির জন্য প্রযোজ্য হবে। পরবর্তীতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে টিকা গ্রহণ করতে পারবেন।
৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদানের জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত হাসপাতালের তালিকা :
বিএসএমএমইউ : সাংবিধানিক পদধারীরা, কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়।
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ : জননিরাপত্তা বিভাগ।
পিলখানা বিজিবি হাসপাতাল : সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকা, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, মিরপুর এবং পোস্তগোলা : প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : অর্থ বিভাগ, অর্থ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল : সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল: স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট : পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট : ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান : শিক্ষা ও ভূমি মন্ত্রণালয়।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল : পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়।
জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা : বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
শেখ হাসিনা জাতীয় ইস্টিটিউট অফ বার্নস অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতাল : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জাতীয় বাতজ্বর জনিত হৃদ রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্র আগারগাঁও : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয় ক্লিনিক : আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টার : যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
আজিমপুর মা ও শিশু হাসপাতাল : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী : খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ঢাকা : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ঢাকা : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।
ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতাল লালবাগ : নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
নাজিরা বাজার মাতৃ সদন : শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
ঢাকা ডেন্টাল কলেজ মিরপুর : ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল শ্যামলী ঢাকা : রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।