কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী (৭০) আর নেই। টানা ১২ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে হেরে গেছেন।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
খবরটি নিশ্চিত করেন কবরীর ছেলে শাকের চিশতী।
১৫ এপ্রিল বিকাল থেকে তিনি রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
এর আগে ৮ এপ্রিল থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নন্দিত অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী উক্ত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
৫ এপ্রিল করোনা পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়ার পর রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কবরী।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হয় কবরীর। এরপর ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘দেবদাস’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘দীপ নেভে নাই’-এর মতো অসংখ্য দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি।
সম্প্রতি নির্মাতা কবরী শেষ করেছেন তার পরিচালিত সরকারি অনুদান পাওয়া ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’র শুটিং। ছবিতে তিনি নিজেও অভিনয় করেছেন। কবরীর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালে ‘আয়না’ সিনেমা দিয়ে।
বিশ্ববাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেছিলেন কবরী
চট্টগ্রামে জন্ম জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী সারোয়ারের৷ তাঁর আসল নাম মিনা পাল৷ পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷ ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব কবরীর৷ এরপর থেকে ধীরে ধীরে টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯ এপ্রিল পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি৷ সেখান থেকে ভারত পাড়ি দেন৷
সেসময় রাজনৈতিক অঙ্গনের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকলেও একজন শিল্পী হিসাবে, কলকাতা গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন৷ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সেসময়ের জনপ্রিয় বড় মাপের সংগীত পরিচালক, সংগীত শিল্পী ও অভিনয় শিল্পীদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করেছেন তিনি৷ এভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ ও পোশাক সংগ্রহ করতেন তাঁরা৷ বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তার আহ্বান সম্বলিত কবরীর বিখ্যাত ভাষণ ভারতের ‘আকাশবাণী’ থেকে মাঝে মাঝেই বাজানো হতো৷ তাঁর এই ভাষণ তাঁর মা-বাবাসহ বাংলাদেশের অনেক মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারাও শুনেছিলেন বলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জানতে পারেন কবরী৷
বরেন্য এই মুক্তিযোদ্ধা অভিনেত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন : সকালে সন্তানের জন্ম, বিকালেই করোনা আক্রান্ত মা রিফাত সুলতানার মৃত্যু