ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন প্রতিনিধি:
হাতুড়ীটা শুধু হাতে নেবো পায়ের কাছে নীচে থেকে কিন্তু হাতুড়ী নেই!! কি করে সম্ভব!!! এক মিনিট আগে আমি নীচে রেখে, চেয়ার টেনে আরেক পাশে রেখেই, হাডুড়ীটা নিতে গেছি!! অসম্ভব বেপার! ছোট লোহা হলে না হয় ভাবতাম দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এতো বড় হাতুড়ী কিভাবে গায়েব হয়ে যায়???আমি এপাশ ওপাশ চেয়ার সরিয়ে হাতুড়ী খুঁজছি আর ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন, শুনেছি কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও এই দোয়া পড়লে জিনিষ খুঁজে পাওয়া যায়, যদিও আমরা সাধারনত কেউ মারা গেলে পড়ি, যাই হোক খুঁজছি প্যাসেজের চারপাশে, প্যাসেজের পাশে নীচে যাবার সিঁড়ি আর সেই সিঁড়ির একবারে নীচে ছোট্ট একটা স্টোর রুম, যেখানে আমি আমার আয়রন বোর্ড, আয়রন আর টুলবক্স সহ হাতুড়ী রাখতাম, ভাবলাম অতিরিক্ত স্ট্রেস করছি হয়তো, মনের ভুলে স্টোরে হাতুড়ী রেখে এসেছি, নীচে গিয়ে স্টোর খুঁজলাম আয়রন আর আয়রন বোর্ড ছাড়া কিছুই নেই, পাশে রান্না ঘরেও খুঁজলাম, যদিও আমি ভাল করেই জানি আমি ওয়ালে পিন / লোহা গাঁথার সময় নীচে আসিনি, তবুও মনকে বোঝাতে খুঁজছি, আবার উপরের প্যাসেজে এলাম , তার আগে আবারও স্টোর খুলে চেক করলাম , চেয়ার টুলবক্স সব কিছু সরিয়ে সরিয়ে খুঁজছি, না নেই কোথাও নেই , মাথাটা আর কাজ করছে না, একে তো একা একা মুভ হইছি ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে, তারপর ঘর গোছানো শপিং রান্না করা , ঐদিকে হাসবেন্ড হাসপাতালে, মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাব!
সিঁড়িতে বসে পড়লাম, আর নাটক সিনেমায় যেমন নিজে নিজে কথা বলে তেমন বলতে লাগলাম জোরে জোরে…..”প্লিজ আমার হাতুড়ীটা দিয়ে দাও, আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবেনা, আমি এই ঘর থেকে যাবোনা, যতদিন আমার মন মতো সুন্দর একটা বড ঘর পাবো, আমি এখানেই থাকবো, আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবেনা, প্লিজ আমার হাতুড়ীটা দিয়ে দাও, সত্যিই আমি খুহ টায়ার্ড , আর পারছিনা,” বলে কান্না শুরু করলাম, কিছু সময় কেঁদে কেটে চোখ মুছে আবারও বললমা….” প্লিজ হাতুড়ীটা ফিরিয়ে দাও, নীচে যে স্টোর আছে ওখানে রেখে দাও, আমি নিয়ে নেবো ওখান থেকে, প্লিজ প্লিজ,”এভাবে বলে নীচে গিয়ে আবার স্টোর খুললাম বিসমিল্লাহ বলে! আশ্চর্য্য! কি সাংঘাতিক ব্যাপার! স্টোরের মাটিতে হাতুড়ী রাখা !! আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা, হাতে নিয়েও হাতুড়ী মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।
খুশীতে চিৎকার করে থ্যাংকু থ্যাংকু বলতে লাগলাম , সেই অদৃশ্য মেয়ের উদ্দেশ্যে ! খুশী মনে উপরে গিয়ে , ওয়ালে বাকী ছবি গুলো লাগালাম বিনা বাধায়, তারপর সব কিছু গুছিয়ে টুলবক্স সহ হাতুড়ী নিয়ে রাখলাম স্টোরে, নীচে এসে প্রথম কাজ যেটা সেটা হলো মেছাব/ হুজুরকে কল দেয়া, কল দিলাম ধরলেন না, কিছুক্ষণ পর আবার দিলাম, এবার ধরলেন, বললাম কি দেখেছেন মামা? তিনি জানতে চাইলেন আমি কখন ঘরে থাকি? আমি বললাম সব সময়, এবং কেনো জানতে চাচ্ছেন? মামা বললেন তাহলে কালকে আমি আসবো তোমার বাসায়, আমি বললাম তাহলে বড় বাচ্চাগুলো স্কুলে চলে গেলে আসেন মামা, কারন আমি চাইনা তাদের সামনে এসব ডিসকাস করতে, তা নাহলে ওরা ভয় পাবে, তিনি বললেন আগামীকাল সকাল ১১/১২টার দিকে আসবেন।
আমি ফোন রেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম ছোটো ছেলেকে নিয়ে , কিছুক্ষন পরে বাকী বাচ্চারও স্কুল থেকে চলে এলো, ওদেরকে খাবার দিচ্ছি, ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই, ছোট্টটা মাটিতে কার্পেটের উপর বসে তার ছোট ছোট খেলনা গাড়ী নিয়ে খেলছে আর একা একা কথা বলছে, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে যেনো কার সাথে কথা বলছে, তবুও আমি জানতে চাইলাম…. আব্বু তুমি কার সাথে কথা বলছো? সে তার পাশে পয়েন্ট করে দেখিয়ে বললো … মাই ফ্রেন্ড, কিন্তু ওখানে কিছুই নেই , আমরা কেউ কিছুই দেখছিনা, বড় গুলো সন্দেহর দৃষ্টিতে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো,আমি বললাম তোমরা ভয় পাচ্ছো কেনো? বাচ্চারা এমন ইমাজেনারী বন্ধু বানিয়ে খেলে, তোমরা খাও, ওরা টেবিলে বসে খাচ্ছে আর আমি ভাবছি কাল মামা আসলে কি শুনবো ……..চলবে
লেখিকা: ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন।