আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জার্মানিতে কোনও সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য হুমকির অভিযোগ উঠলে তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া সহজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজা।
বর্তমানে এই প্রক্রিয়া শেষ হতে গড়ে চার বছর লেগে যায়। এইসময় অভিযুক্ত ব্যক্তি পুরো বেতন পেয়ে থাকেন। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত বুধবার বলেন, ‘আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক রাষ্ট্রকে চরম ডানপন্থিদের মাধ্যমে অন্তর্ঘাত হতে দেবো না।
এমনকি রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন প্রস্তাব আনা হয়৷ যার মধ্যে রয়েছে: জার্মানির সেনাসদস্য ফ্রাঙ্কো সিরীয় শরণার্থী সেজে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন তিনি কারাগারে আছেন।
এছাড়া সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে ‘রাইশব্যুর্গার আন্দোলন’-এর সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। জার্মান ‘রাইশ’ শব্দের অর্থ সাম্রাজ্য, আর ‘ব্যুর্গার’ মানে হচ্ছে নাগরিক। রাইশব্যুর্গাররা নিজেদের জার্মান সাম্রাজ্যের নাগরিক বলে দাবি করেন। আধুনিক জার্মানিকে নিজেদের রাষ্ট্র বলে মানতে রাজি নন তারা।
তাদের দাবি, ১৯৩৭ বা ১৮৭১ সালের জার্মান সাম্রাজ্যের সীমানাই আসল জার্মানি। বর্তমান জার্মানির সরকার, পার্লামেন্ট, বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তাবাহিনীকেও তারা মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা পুতুল বলে মনে করেন।
ইয়েন্স মায়ার নামক এক বিচারক চরম ডানপন্থি ভাবাদর্শের অনুসারী বলে মনে করে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। এসব ঘটনার সঙ্গে এমন সব ব্যক্তি জড়িত যারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাজা বলেন, ‘যারা রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের এর জন্য কাজ করা উচিত নয়।’
ফ্যাজার এই প্রস্তাব পাস হলে সরকার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে অভিযুক্তকে চাকরিচ্যুত করতে পারবে। বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা করা হয়।
তবে চাকরিচ্যুতির প্রক্রিয়া দ্রুত করার লক্ষ্য পূরণ আসলেই সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে ‘জার্মান অ্যালায়েন্স অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জাজেস’৷ জার্মানির ‘সিভিল সার্ভিস এসোসিয়েশন’ও তেমনটা মনে করছে।
এদিকে জার্মান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন বলছে, যাদের চাকরিচ্যুত করা হবে তারা পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে, কারণ সেটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেক্ষেত্রে ওই প্রক্রিয়া আগের মতোই দীর্ঘ হতে পারে বলে মনে করছে তারা।
জার্মানির বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে ২০০৮ সাল থেকেই সরকারি চাকরিজীবীদের দ্রুত চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চালু আছে। সেখানে যে পদ্ধতি চালু আছে তাকে মোটামুটি মডেল হিসেবে ধরে নিয়েই খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাজা।
তবে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যে ঠিক কতজন সরকারি চাকরিজীবীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেই হিসেব দিতে পারেননি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র। তার দাবি, রাজ্য কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য সংগ্রহ করে না।
ফ্যাজার খসড়া প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য উত্থাপন করা হবে। জার্মানির জোট সরকারের অংশ সবুজ দল ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবটি সমর্থন করবে। তবে তার আগে বিলে কিছু সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে তারা।