আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দখলদার ইসরায়েলের নৃংশতার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য গণঅনুদান তুলছে ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাস। মোবাইলভিত্তিক অর্থ লেনদেন মাধ্যমের পাশাপাশি সরাসরি বারিধারায় দূতাবাসে গিয়েও এ অনুদান জমা দেয়ার সুযোগ থাকছে।
সোমবার (১৭ মে)দূতাবাসের ওয়েবসাইট এক বার্তায় অনুদান আহ্বান সংক্রান্ত এক বার্তা দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, এই কঠিন সময়ে অনেক বাংলাদেশি তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। অনেকে ফিলিস্তিনের জন্য অনুদান দেয়ার ভীষণ আগ্রহ দেখিয়েছেন।
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নম্বরে অর্থ পাঠানো যাবে-
০১৭১৫৮৩৩৩৩০২ (রকেট, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (নগদ, পারসোনাল), ০১৩০১৭৯৪২৯৫ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৫৩১৭১২৯৪৫ (বিকাশ, পারসোনাল)।
এসব নম্বরে অনুদান পাঠানোর পর অর্থের অংক ও প্রেরকের পরিচয় ০১৯৮৮১৪১৪১৪ নম্বরে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে।
কেউ চাইলে বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসে সরাসরি গিয়ে অনুদান দিতে পারেন। সেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগদ অনুদান গ্রহণ করা হবে।
আর ওষুধ পাঠানোর বিষয়ে তথ্য জানতে ইমেইল করতে হবে pemnews.dhk@gmail.com ঠিকানায় এবং কথা বলা যাবে +৮৮০১৯১৪৪২৮৭৫১ নম্বরে।
ফারাজ করিম চৌধুরীর উদ্যোগ
এদিকে দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এই বার্তা প্রকাশের আগে চট্টগ্রাম-৬ আসনের (রাউজান) সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী ফিলিস্তিনিদের জন্য ওষুধ পাঠানোর একটি উদ্যোগ নেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত পেজে এক বার্তায় ফারাজ করিম বলেন, ‘ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের জনগণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নয় প্রকারের ওষুধ। আমি নাম জানতে চাইলে তারা বলেন- Enoxaparin Injection 40mg, Enoxaparin Injection 60mg, Paracetamol 500mg, Vancomycin Injection 500mg, Meropenam Injection 1gm, Amiodarone 100mg, Largactil, Phenergan 25mg ও Budesonide Nasal Spray।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘ফিলিস্তিনবাসীর জন্য যারা সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক, তারা এসব ওষুধ আমার নামে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের জলিল নগর, রাউজান শাখায় পাঠাবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারাজ করিম বলেন, ‘আমি এই বিষয়টি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশ-বিদেশ থেকে সবাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। তারা বলেন, সবার পক্ষে ওষুধ পাঠানো সম্ভব নয়। বেশ কয়েকজন নগদ টাকা পাঠাতে ইচ্ছুক। তাদের কথা বিবেচনায় আমি আবারও ফিলিস্তিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছি। এরপর তারা আমাকে দুটি নম্বর দিয়েছেন। ওই নম্বরে (৪১০৮১৩৮২, ৪০১৮০৮৪১) যে কেউ ফিলিস্তিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে বিকাশ নম্বর নিয়ে টাকা পাঠাতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ সওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার এই প্রচেষ্টাকেও অনেকে সন্দেহের চোখে দেখেছে। ভালো কাজে বাধা আসে শুনেছি। তবে তারপরও নিজের আত্মসম্মানে কিছুটা হলেও লেগেছে। তবে থেমে থাকার মানুষ আমি কখনোই ছিলাম না। নিয়ত যেখানে সৎ, সেখানে সমালোচনাকে আমি ভয় করি না। যাদের সন্দেহ হয় তারা উল্লেখিত ফিলিস্তিন দূতাবাস নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।’
ফারাজ করিমের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী মো. কামাল উদ্দিন। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনবাসীর নির্যাতন দেখে চোখের পানি ফেলেছি। কিন্তু আমার সামান্য সহযোগিতার ইচ্ছা থাকলেও কোনো মাধ্যম পাচ্ছিলাম না। ফারাজ করিমের ভিডিও দেখে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি সামান্য সহযোগিতা করেছি।’
চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আলমগীর বলেন, ‘এমপি সাহেবের ছেলে ফারাজ করিমের কর্মকাণ্ড আমি নিয়মিত ফেসবুকে দেখি। এলাকায় তার মানবিক কর্মকাণ্ড আমার খুব ভালো লাগে। আজকে তার একটি পোস্টে দেখেছি, ফিলিস্তিনবাসীর জন্য কিছু ওষুধ খুব প্রয়োজন। এই পোস্ট দেখামাত্র আমি সাধ্যমতো ওষুধ কিনে কুরিয়ারে প্রেরণ করছি। তার মাধ্যমে সামান্য সহযোগিতা নিয়ে নির্যাতিত মানুষের দাঁড়াতে পারছি এজন্য তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আল্লাহ যাতে তার কাজের উত্তম প্রতিদান দেন।’
নিজেদের বসতি থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও মুসল্লিদের আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে রোজার শুরু থেকেই সেখানে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। ৭ মে পশ্চিম তীর ও শেখ জাররাহ এলাকায় ইহুদি বসতি স্থাপনে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর উচ্ছেদের প্রতিবাদে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি মুসল্লি আল আকসা মসজিদে জমায়েত হন। বিক্ষোভ দমনে ইসরায়েলি বাহিনী জমায়েতকারীদের ওপর জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিও ছোঁড়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা আল-আকসা মসজিদের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। সে ঘটনায় অন্তত ১৬৩ ফিলিস্তিনি আহত হন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামলে পরদিন ৮ মে রাতেও ইসরায়েলি পুলিশ ফিলিস্তিনিদের ওপর বলপ্রয়োগ করে। ১০ মে সকালে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাণ্ডব চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তারা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হন। এই সহিংসতা তারা চালাতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতে ইসরায়েলি দখলদারদের বর্বরতা ভিন্নমাত্রা নেয়। ওই বর্বরতার প্রতিবাদে গাজা উপত্যকা থেকে মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস রকেট হামলা চালালে তার অজুহাত তুলে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বসতিতে বিমান হামলা চালাতে শুরু করে ইসরায়েল। এতে সোমবার (১৭ মে) পর্যন্ত ১৯৮ জন ফিলিস্তিনির প্রাণ হারানোর খবর মিলেছে। যাদের মধ্যে ৫৮ জনই শিশু। এর মধ্যে রোববারই (১৬ মে) ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪২ ফিলিস্তিনির প্রাণ ঝরেছে। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি।
সূত্র: জাগো নিউজ