শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা পরই সারাদেশে সকল মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা চলার কারণে অনেক কওমি মাদ্রাসা আজ বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) পর্যন্ত খোলা ছিল। আজ পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরা শুরু করেন। গত ৩ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ২২২টি কেন্দ্রে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এ পরীক্ষা শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ বেশ কিছু মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে যাদের বাড়ি দূরে তারা আছেন দুশ্চিন্তায়। এছাড়া জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় সারাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়েছে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার ১৭৭টি কওমি মাদ্রাসার সবগুলো সরকারি নির্দেশনা বন্ধ রয়েছে। ইসলামী ফাউন্ডেশনের মানিকগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসাইন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার সদর উপজেলায় কয়েকটি মাদ্রাসায় সরেজমিনে গিয়ে বন্ধের এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের মানিকগঞ্জ জেলা অফিসের তথ্যানুযায়ী, ১৭৭টি কওমি মাদ্রাসার মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় রয়েছে সর্বাধিক ৫০টি। এছাড়া সিংগাইর উপজেলায় ৪৮টি, ঘিওর উপজেলায় ২৩টি, সাটুরিয়াতে ১৯টি, শিবালয় উপজেলায় ১৪টি ও হরিরামপুর উপজেলায় ৭টি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে।
জেলার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নেতা মাওলানা খতিব সাঈদ নুর জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তারা মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা অবধি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন তারা।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কওমি মাদ্রাসাগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকেই মাদ্রাসাগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে বুধবার বার্ষিক পরীক্ষার শেষ বিষয় দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা বন্ধ পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর এলাকার ‘মাদ্রাসা দারুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ’ প্রতিষ্ঠানটিতেও কোনও শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানটির কিতাব বিভাগের শিক্ষক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন জানান, তার মাদ্রাসায় আবাসিক ও অনাবাসিক মিলিয়ে আড়াইশ শিক্ষার্থী ছিল। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে সরকারি নির্দেশে তারা মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, গত ২৯ মার্চ সরকারি নির্দেশনার পর থেকেই এতিমখানা ছাড়া শরীয়তপুরে সব কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে লকডাউনের কারণে দূরের কিছু শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে পারেনি। তারা এখনো মাদ্রাসার আবাসিকে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন মাদ্রাসা ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মাদ্রাসার কার্যক্রম প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকেই বন্ধ করে রেখেছেন, তবে এতিমখানাগুলো চালু রয়েছে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার মনোহর বাজারের জান্নাতুন নিস্ওয়ান মহিলা মাদ্রাসার মোহতামীম মাওলানা শিব্বীর আহমাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রজ্ঞাপন চালু হওয়ার পর থেকেই অভিভাবকদের খবর দিয়ে ছাত্রীদের তাদের কাছে বুঝিয়ে দিই। দূরের কিছু শিক্ষার্থী এখনও লকডাউনের কারণে যেতে পারেনি। লকডাউন শেষে তাদের আমরা অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দেবো। তবে এতিমখানা খোলা থাকবে।
আঙ্গারিয়া উসমানিয়া কওমি মাদ্রাসার মোহতামীম মাওলানা আবুবক্কর জানান, এতিমখানা ব্যতীত আমাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আবেদা আফসারী জানান, আমরা সকল মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকেই জেলার সব মাদ্রাসাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। যদি কেউ নিয়ম অমান্য করে মাদ্রাসা খোলা রাখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সরকার কর্তৃক নির্দেশনা জারির পর জেলার ৯টি উপজেলার সব কওমি মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে জেলা-উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা যায়, কওমি মাদ্রাসাসহ সব ধরনের মাদ্রাসা (আবাসিক ও অনাবাসিক) বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খোলা রয়েছে এতিমখানাগুলো। সিরাজগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কলোনিতে জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া (কওমি মাদ্রাসা), সদর উপজেলা সয়দাবাদ ইউনিয়নের ডিগ্রীরচর ইসলামিয়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা, উল্লাপাড়া উপজেলায় পুকুরপাড় ফয়জুল উলুম মহিউচ্ছুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা, বালসাবাড়ী হামিউচ্ছুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা, এনায়েতপুর কাসেমুল উলুম কওমি মাদ্রাসা, রায়গঞ্জ উপজেলার জামিয়া-নিজামিয়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা, মদিনাতুল উলুম কওমি মাদ্রাসা, সলমাইল কওমি মাদ্রাসা, মাদবাসাতুল উলুমিল ইসলামিয়া মাদ্রাসাসহ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
উল্লাপাড়ার পুকুরপাড় ফয়জুল উলুম মহিউচ্ছুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা সুপার জয়নাল আবেদীন বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পর আমি আমার মাদ্রাসা ছুটি ঘোষণা দিয়েছি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল্লাহ বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে কওমি মাদ্রাসার কোনও তথ্য নেই। তবে জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ বলেন, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার কওমি মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কওমি মাদ্রাসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে গত ৬ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। কিন্তু দু’দিন পেরিয়ে গেলেও চাঁদপুরে অনেক মাদ্রাসাই খোলা রাখার খবর পাওয়া গেছে। কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় মাদ্রাসা খোলা রাখতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা কওমি সংগঠনের নেতারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার জামিয়া এরাবিয়া খেড়িহর কওমি মাদ্রাসা, জামিয়া ইসলামিয়া উয়ারুক রহমানিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থানেই মাদ্রাসা খোলা রয়েছে।
জেলা কওমি সংগঠনের সহ-সভাপতি মুফতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার কারণে মাদ্রাসা বন্ধে একটু দেরি হয়েছে। আমার মনে হয়, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই অধিকাংশ মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে।
চাঁদপুর জেলা কওমি সংগঠনের সাধারণ মাওলানা লিয়াকত হোসাইন জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার কওমি মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে হয়তো দু’একটি মাদ্রাসা খোলা থাকতে পারে। তাও আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া এতিমদের জন্য রবিবার আবার খুলতে পাতে পারে। কারণ, এতিমখানা খোলার সুযোগ রয়েছে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন বলেন, কওমি মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে। বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে পরীক্ষা থাকায় তারা বৃহস্পতিবারও খোলা রেখেছিল। তবে আগামীকাল থেকে এতিমখানা ছাড়া সকল মাদ্রাসা বন্ধ থাকবে। কোথাও খোলা পাওয়া যাবে না। এরপরও কেউ মাদ্রাসা খোলা রাখলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করার নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। তারা বলেছে একটা পরীক্ষা আছে সেজন্য সময় চেয়েছে। তারপরও আমরা আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা কোনটাই খোলা রাখতে দেবো না। সবগুলোই বন্ধ করে দেবো।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কওমি মাদ্রাসা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর সেটা মেনে ময়মনসিংহের সকল কওমি মাদ্রাসা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বার্ষিক ও বোর্ডের দাওরায়ে হাদিস ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেই মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের সকল নির্দেশনা মেনেই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে চান।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মহানগরীর বেশ কিছু কওমি মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, বোর্ডের দাওরায়ে হাদিস ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী মাহফুজ আহমেদ জানান, গত ৩ এপ্রিল তাদের দাওরায়ে হাদিস ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ৎটার সময় শেষ হয়ে গেছে। দশটি পরীক্ষা ১০ দিনে নেওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে প্রতিদিন দুই শিফটে পরীক্ষা নিয়ে ৫ দিনেই শেষ হয়ে গেছে। এতে করে সাড়ে ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা তাদেরকে দুই ঘণ্টায় শেষ করতে হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শক মাওলানা আতাউল্লাহ জানান, সরকারি নির্দেশমতো ১০ দিনের পরীক্ষা পাঁচদিনে শেষ করতে হয়েছে। আগে যেখানে শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো এখন সময় কমে ২ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়েছে তাদের। সরকারের প্রতি আস্থা রেখে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সরকারের সকল নির্দেশনা মানতে বাধ্য। এই হিসেবে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে কওমি মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল ছেড়ে প্রত্যেকের বাড়ি ঘরে চলে যাবে।
মহানগরীর ভাটিকাশর জামিয়া মোহাম্মদিয়া নুরিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি শফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রায় সাড়ে ৩শ’ কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতি বছর রমজানের আগেই বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মাদ্রাসা এক মাস বন্ধ থাকে। এবারও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা শেষে গত ২৫ মার্চ বেশিরভাগ মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দাওরায়ে হাদিস বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য কিছু মাদ্রাসার আবাসিক হল খোলা ছিল। বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে গেছে। সরকারী নির্দেশনা পেলে রমজানের পর মাদ্রাসা খোলা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শুধু মাদ্রাসা না, যেকোনো ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার সকল কওমি মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী জেলার সকল কওমি মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সকল কওমি মাদ্রাসা প্রধানগণ সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রেখেছেন বলে তাকে নিশ্চিত করেন।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মৌলভীবাজার জেলায় পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত এতিমখানা বাদে সব মাদ্রাসা (আবাসিক-অনাবাসিক) বন্ধ রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পর থেকে জেলার ছোটবড় মিলিয়ে ১৩০টি কওমি মাদ্রাসা আবাসিক থেকে অনাবাসিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারকি করা হয়; কোন মাদ্রাসা লুকিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের নজরদারি আছে।
রাজনগর উপজেলা এক মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, রাজনগর উপজেলায় ৩৩টি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেওয়ার পর সব ধরনের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, দেশের সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অবস্থিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পর্যায় থেকে মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য মাওলানা ইয়াহিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর বুধবার মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গতকাল থেকে মাদ্রাসায় সকল ধরনের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আজকের মধ্যে হোস্টেল ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল হায়াতুল উলিয়া’র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী এনামুল হাসান ফারুকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আল হায়াতুল উলিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর আর কোনও পরীক্ষাও নেই।
এদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছেন, মাদ্রাসাগুলোতে আবাসিক-অনাবাসিক যেগুলো আছে তা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এতিমদের যাওয়ার কোনও জায়গা না থাকার কারণে এতিমখানাগুলো খোলা থাকবে। তবে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে আবাসিক-অনাবাসিক যেগুলো আছে তা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় গত ৬ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসাসহ দেশের সব ধরনের মাদ্রাসা (এতিমখানা ছাড়া) বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ওইদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
আরও পড়ুন : দোকানপাট-শপিংমল খুলছে কালই