অর্থনীতিতে করোনার আঘাত এবং আমাদের করনীয় : নাইম ইসলাম নিবির
Update Time :
বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১
৩১৫
Time View
করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ঠিক রাখা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং অন্যদিকে কিছুটা টেকনিক্যালও বটে। তবে সার্বিকভাবে আমি বলবো উৎপাদনমূখীতা এবং শ্রমশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা অনেকটাই সম্ভব।
বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব ধীরে ধীরে সবাই এখন উপলব্ধিত করছে। করোনা–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জন্য এ প্রভাব কাটিয়ে ওঠা বিরাট চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। শিল্প, পরিবহন ও ট্যুরিজম খাতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও হয়তো কিছুটা রয়ে যাবে।
একইসাথে বাংলাদেশের জিডিপিতে পোশাক ও প্রবাসী আয়ের অবদান অক্ষুণ্ণ না–ও থাকতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনার ওপর কোভিড-১৯–এর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে।
প্রভাব ফেলবে পোশাকশিল্পেও। একই সঙ্গে দেশে পোশাক খাতগুলোতে সুস্থ পরিবেশ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। কর্মহীন হয়ে পারেছে অনেক কর্মী। অনেক প্রবাসীরাও তাদের চাকরি হারিয়েছেন।
তাই করোনা–পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জনবহুল দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অনেক দেশ নিজস্ব চাহিদা মেটাতে পণ্য রপ্তানি কমিয়ে বা বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে আমদানিনির্ভর দেশ ও এলাকাগুলোতে খাদ্যঘাটতি দেখা যে দেবে না, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে দেশের কৃষি খাত৷ একটা সময় ছিলো যখন আমরা দেশের পাঁচ কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। আজ তিন গুণের বেশি জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনে আমরা সফল হয়েছি। করোনা–পরবর্তী সময়গুলোতেও যেন এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে সেদিকে আমাদের নজর বাড়ানোর পাশাপাশি আরও একটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। করনার পরবর্তী সময়ে বিশ্ববাজারে প্রচুর শ্রমিকদের ঘাটতি সৃষ্টি হবে। করনার পূর্ববর্তী সময়ে কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। যার কারণেই কিন্তু মানুষ বিদেশমূখি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা আজ মিলিয়ন মিলিয়ন রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারছি। আর এই শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের মাধ্যমেই কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে পেরেছি। করোনার মাঝেও গত বছর জুলাই মাসে বৈদেশিক খাত থেকে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আমরা অর্জন করি। ইতিহাসে এক মাসে আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আমরা অর্জন করিনি। এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের কারণে ৩০ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে তিন হাজার ৭২৯ কোটি ডলার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ তিন লাখ ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। যা অবশ্যই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি মাইলফলক।
তাই শ্রমশক্তি রপ্তানিই হতে পারে সঠিক এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি, তথা অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতবছর শীত চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল করোনার প্রথম পর্যায়ের আক্রমণ। এ কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব বেশি একটা ক্ষতি হয়নি। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত মোকাবিলা করাটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কিছুটা কঠিন হয়ে পড়বে।
অর্থনীতি এখন যে অবস্থায় আছে, তার চেয়ে কিছুটা খারাপ তো হবেই।
আর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাত্রা প্রবল হলে প্রথমবার যেভাবে মৃত্যু হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেভাবে যেনো মৃত্যু না হয়, বা মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য প্রত্যেক দেশে যদি আবারও লকডাউনের মাত্রা দীর্ঘ হয়। তাহলে এর প্রভাবও পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এতে আমাদের অর্থনীতি এখনকার চেয়ে আরও দুর্বল অবস্থানে চলে আসবে।
তবে এখন পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থান যতটা দূর্বল হবার আশংকায় ছিলো তার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। শুধুমাত্র উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা, শ্রমজীবী মানুষের পরিশ্রম ও সরকারের সহযোগিতা— এই তিন শক্তি এক হওয়ায় অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও জোরে ঘুরছে। এক্ষেত্রে সাহস জোগাচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত রফতানি আয় এবং প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ার সুফল অর্থনীতির অন্যান্য খাতের সুবিধাভোগীরাও পাচ্ছেন। রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। ব্যাংকের আমানতও বাড়ছে। দীর্ঘদিনের মন্দায় থাকা পুঁজিবাজারেও প্রাণ ফিরে এসেছে। গলির দোকান থেকে শুরু করে বড় শিল্পকারখানা সবই চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতো। আমদানি-রফতানি, উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক সময়ের মতোই সচল রয়েছ। তাই কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগেই আমাদেরকে এই সেক্টরগুলোর প্রতি নজর বাড়াতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
করোনা ভাইরাস শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি আর মৃত্যুর মিছিলই নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে গিয়েছে। দেশে বিদেশে অসংখ্য মানুষ চাকুরি হারিয়েছে।
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে একের পর এক নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যার প্রভাব সকল খাতকেই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে দিয়েছে। তবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত দূরদর্শীতা এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে এই ক্ষতি থেকে আমরা আস্তে আস্তে নিজেদেরকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছি।
বাংলাদেশে রপ্তানি আয় এমনিতেই পড়তির দিকে৷ গত জুলাই থেকে এই এপ্রিল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমেছে চার দশমিক সাত নয় ভাগ৷ অন্যদিকে অব্যাহতভাবে কমছে পোশাক রপ্তানি৷ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সেখানকার বাজারগুলোতে প্রভাব পড়ে গিয়েছে৷ ইটালিতে মানুষ ঘর থেকেই বের হতে পারছিল না৷ অথচ গত ২০১৯ সালেও ইতালি থেকে বাংলাদেশ ১৪৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিলো৷ কিন্তু করনার কারণে ধীরে ধীরে একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে গোটা ইউরোপে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও৷ বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ৬২ ভাগ আসে ইউরোপ থেকে আর ১৮ ভাগ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷
কিন্তু যদি করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পোশাকের চাহিদা অনেক কমে যাবে৷ মানুষ ঘর থেকে বের হতে না পারার কারণে পোশাক ক্রয় করা এবং শপিং মলে যাওয়া তেমন ভাবে সম্ভব হবে না।
যেসকল দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এরইমধ্যে কমে গেছে৷ সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি শ্রমিক বা ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনমত আয় করতে না পারলে দেশে পরিবারের কাছে আগের মতো টাকা পাঠাতে পারবে না৷ তাই স্বভাবতই রেমিট্যান্স কমতে থাকবে৷ এর প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে৷
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকা শক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স৷ রপ্তানি আয় কমে গেলে দেশের শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাওয়া বা কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে৷ অন্যদিকে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো কমিয়ে দিলে তাদের পরিবার দেশে আগের মত খরচ করতে পারবে না৷ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা বাণিজ্যে৷ চাহিদা কমে গেলে ভোক্তা পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে৷
আবার বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রবল আকারে হানা দিলে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাবে৷ সব মিলিয়ে আগামীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে আমাদের জন্য৷ তাই এই মূহুর্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃষি ব্যবস্থার দিকে গুরুত্বারোপ করাতে হবে।
দেশপ্রেম আমাদের একটি সহজাত প্রবৃত্তি।আর এই প্রবৃত্তি আরও বহুগুনে বেড়ে যায় দেশের বাইরে থাকলে।সুদুর প্রবাসে থেকে নিজের দেশের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটা আসলে কোনদিন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।আর এই আবেগ আর ভালোলাগার জায়গা থেকেই জন্ম আমাদের “দৈনিক প্রত্যয়” এর।সারা বিশ্বের প্রতি মুহুর্তের ঘটে যাওয়া সত্য ও নিরপেক্ষ খবর গুলো আপনাদের কাছে পৌছে দেওয়াই আমাদের প্রত্যয়।আমাদের এই নিউজ পোর্টাল শুধু সংবাদ প্রচার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবেনা বরং ইতিবাচক সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে নানা ধরনের ভূমিকা রাখবে ইনশাল্লাহ।