শেখ সাখাওয়াত হোসেন, পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি:পাবনার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ছেলে উৎস ঘোষ এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। খুশির খবরেও আনন্দ নেই পরিবারটির। কারণ টাকার অভাবে তার ভর্তি অনিশ্চিত।
মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ উৎস ঘোষের বাবা অধীর ঘোষ পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ১নং ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চর-ভাঙ্গুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের শরৎনগর বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
এক টুকরা বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। বাবার সামান্য আয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে চলে সংসার। বড় ছেলে অভিজিৎ ঘোষ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অভিজিৎ ঘোষ টিউশনি করে নিজের ও ছোট ভাই উৎস ঘোষের পড়ালেখার খরচের জোগান দিতেন।
এ বছর উৎস মাগুরা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এখন মেডিক্যালে পড়ালেখার খরচের জোগান নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা অধীর ঘোষ। এমনকি ভর্তির জন্য যে টাকা লাগবে, সেটিও জোগাড়ের জন্য বিভিন্নজনের কাছে তাকে হাত পাততে হচ্ছে।
উৎস ঘোষ বলেন, আমার বাবা ও আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। এখন অর্থের অভাবে হয়তো আমার সেই ইচ্ছে পূরণের কাছাকাছি এসেও অনিশ্চিত। কেউ আমাকে সহায়তা করলে পাঁচ বছর পড়াশোনা শেষ করে মানুষের সেবা করবো।
জানা যায়, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট উৎস ঘোষ ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি সেবাব্রতী বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পান। পরে উপজেলা সদরের মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময় উৎস টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন।
এরপর জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে রংপুর কারমাইকেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ পান। ভালো ফলাফলের জন্য উৎস একটি ফাউন্ডেশন থেকে মেধাবৃত্তি পেতেন। এ ছাড়া বড় ভাই অভিজিৎ টিউশনি করে নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা খরচ জোগাড় করতেন। এইচএসসি পাস করার পরে ঢাকার একটি কোচিং সেন্টার চার মাস বিনা বেতনে মেধাবী উৎসকে কোচিং করায়।
উৎসের বাবা অধীর ঘোষ বলেন, ‘তিন ছেলে-মেয়ে অত্যন্ত মেধাবী। তবে অর্থের অভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছেলেদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারি না। বড় ছেলে অনেক কষ্ট করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায় ও ছোট ছেলেকে সহযোগিতা করে। কিন্তু এখন মেডিক্যালে ভর্তি এবং পড়াশোনার জন্য এত টাকা জোগাড় করব কিভাবে? এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে মানুষের কাছে ধার-দেনা চাচ্ছি।’ তার সন্তানের অনেক মেধা এবং তাদের অনেক স্বপ্ন থাকলেও স্বপ্ন পূরণের সামর্থ্য তাদের নেই। তাহলে সন্তানের একজন মানবিক চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে?
উপজেলার মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উৎস ঘোষের সাবেক শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘উৎস ঘোষ একজন ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট। তাকে আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, দারিদ্রকে জয় করে উৎস ঘোষের এমন অর্জনে উপজেলা প্রশাসন আনন্দিত। উৎসের মেডিক্যালে ভর্তিসহ পড়াশোনার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’