প্রত্যয় নিউজডেস্ক: আগামী মাসের মধ্যে সব মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৮টি মিলের শ্রমিকদের পাওনা বাবদ মোট এক হাজার ৭৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকা অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া গেছে, যা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলনার ইস্টার্ন জুট মিল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।’
বুধবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিজেএমসির বন্ধ ঘোষিত মিলসমূহের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
বেসরকারি খাতে নতুন করে মিলগুলো চালু করা হবে। সেটা কবে নাগাদ শুরু হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমরা প্রথমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করব। এরপর ব্যাংক লোনসহ বিভিন্ন পাওনা পরিশোধ করব। এর মাঝেই আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলবে। আমরা বসে নেই, পিপিপি প্রক্রিয়ায় একটু সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ মিলগুলো আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করতে। সুতরাং আগে মিলের টাকা পরিশোধ হবে, তারপর আমরা সে প্রক্রিয়ায় যাব। পাশাপাশি আমাদের কমিটির প্রতিবেদনও পেয়ে যাব। এরপর আমরা লিজ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।’
লিজ প্রক্রিয়া কবে নাগাদ শুরু হবে- জানতে চাইলে পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পুরোনো মেশিন আছে, সেগুলো কারা নেবে? সেগুলো বিক্রি করার পর আধুনিকায়ন করতে হবে। যারা নেবে তারা আধুনিকায়ন করবে, তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে। একটি মেশিন আনতে গেলে দুই মাস সময় লাগে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। একটা বিষয়- যারা লিজ নেবে তারা কি পুরোনো মেশিন নেবে কি না? সে বিষয়সহ লিজ প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। সব মিলিয়ে সামনের বছরের শুরুর দিকে লিজ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।’
বিজিএমসিকে কী করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে গেলে তাদের চালাতে আমাদের লোকবলের প্রয়োজন হবে। যারা লিজ নেবে তাদের নজরদারিতে রাখতেও আমাদের লোক লাগবে। যাতে তারা আমাদের সম্পত্তি নষ্ট করতে না পারে। এতে মিনিমাম বিজিএমসি লাগবে। এরপর যারা থাকবে তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বন্ধ ঘোষিত পাটকলসমূহের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও ফের চালু করার লক্ষ্যে ২টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি মিলগুলোর ও অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ করবে। আশা করছি, কমিটির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুনরায় চালু হবে এবং মিলে পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকরা পুনঃকর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।’
পাটকল বন্ধের ফলে উৎপাদিত পাটপণ্যগুলো যেমন চট, ছালা ও বস্তা এখন কোথা থেকে আসবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাটকল বন্ধ হওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের অর্থনীতি যেন ধ্বংস না হয় সেজন্য আমরা এ কাজ করেছি। এর ফলে দেশের বেসরকারি খাত অনেক এগিয়েছে। এই করোনার মধ্যেও তারা ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে।’
পলির বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বা সোনালী ব্যাগ আনার যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু চোরাই পলি ব্যাগ বাজারে আসবে ও থাকবে। আমরা সবসময় মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। আমরা জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া আছে তারা অভিযান চালাচ্ছে। এ জন্য এখন পাটের ভালো বাজার রয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। বর্তমানে পাটের মণ ৩ হাজার ৭০০ টাকা। এ দাম আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘পাটের সোনালী ব্যাগ নিয়ে গবেষণা চলছে। আমরা শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডসেক করার পর এ বিষয়ে কাজ করব। যেহেতু আমরা একটি ফেইজে আছি, তাই এটা নিয়ে কী করব পরবর্তীতে জানানো হবে।’
মনোপলি ব্যবসা শুরু হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একটি পাটকলও সরকারের নেই। সব বেসরকারি খাতে। সুতরাং সরকারি মিল থাকলেই যে দেশের উপকার হবে বেসরকারি দিয়ে হবে না তা কিন্তু নয়। আমাদের পাটকল ছাড়া সবইতো বেসরকারি খাতে। শুধু সেবা খাতে সরকারি মিল আছে।’