নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস শনাক্তে আগামী শনিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফ্লোরা বলেন, আগামী শনিবার থেকে প্রাথমিকভাবে দেশের ১০টি জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর ও সিলেট। এরমধ্যে সিলেট ছাড়া বাকি জেলাগুলোর সদর হাসপাতালে এই টেস্ট করা যাবে। আর সিলেটে অ্যান্টিজেন টেস্ট হবে শহীদ শামসুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ওই ১০ জেলায় পাঠানো হয়েছে। আজ অধিদফতরে তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা অ্যান্টিজেন কিট নিয়ে নিজ নিজ জেলায় চলেও গেছেন। আমরা বলে দিয়েছি, শনিবার থেকে পরীক্ষা শুরু করতে।
প্রসঙ্গত, তিন মাসের বেশি সময় আগে অ্যান্টিজেন নীতিমালা প্রণয়ন করে রাখে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। গত ২৪ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, সরকার করোনার র্যাপিড টেস্টের জন্য অ্যান্টিজেন টেস্টকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত মার্চে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে কেবল আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য র্যাপিড টেস্টের জন্য বারবার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেয়। গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন সম্পর্কিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ন্যাজাল সোয়াবের মাধ্যমে করা অ্যান্টিজেন টেস্টে আর্লি পজিটিভ বা আর্লি ডিটেকশন করা যায়। তাই পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা থাকলে রোগী শনাক্ত করা সহজ হয়। তিনি জানান, পিসিআর পরীক্ষায় যেসব ‘ডিফিকাল্টিজ’ রয়েছে, অ্যান্টিজেনে সেসব নেই। এই পরীক্ষা যেমন সহজে করা যায়, তেমনই মেশিনের দরকার হয়। আলাদা ল্যাবরেটরি বা যে কোথাও করা যায়, এর জন্য বায়োসেফটির দরকার নেই। প্রয়োজন হয় না তেমন দক্ষ নমুনা সংগ্রহকারীরও। দেশের ৪৯১টি উপজেলায় এ পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুরুতর রোগী এলে, তার কোভিড টেস্ট না থাকায় চিকিৎসা না দেওয়া, এমনকি এ অবস্থায় ওই রোগীর মৃত্যুর খবর পর্যন্ত আমরা পেয়েছি। অথচ, মাত্র ১৫ মিনিটে র্যাপিড টেস্ট করা গেলে, পজিটিভ-নেগেটিভ যাই হোক না কেন, রোগীকে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা শুরু থেকেই একথা বলে এসেছি, এতদিন পরে এসেও সেটা করা হচ্ছে—এটা ভালো খবর।’ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা খুব দরকার ছিল আরও আগে থেকেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভোগান্তি কমবে এখন, চিকিৎসকসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হবার হার কমে যাবে।