ওয়েব ডেস্ক: গত ১৫ সেপ্টেম্বর খুচরা, পাইকারি ও উৎপাদক পর্যায়ে ডিম, মুরগির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। মূল্য বেঁধে দেওয়ার ১৯ দিন পেরোলেও বাজারে আগের সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার-সোনালি মুরগি। সরকারি দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশিতে ব্রয়লার আর ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় আর সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩১০ টাকা, কক কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও শুধু ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। বাকিগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও তা বাজারে প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে ১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
একইভাবে সোনালি মুরগির প্রতি কেজির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৯০ টাকা। যা নির্ধারণ করে দেওয়া দামের চেয়ে কেজিতে ২০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান। মুরগির দাম বিষয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবরে শুনেছিলাম ব্রয়লার আর সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব একবারও দেখলাম না। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা কেজিতে, আর সোনালি মুরগি কিনলাম প্রতি কেজি ২৯০ টাকায়। নির্ধারণ করে দেওয়া দামের সঙ্গে বাজারের দামের কোনো মিল নেই। ২০ টাকা বেশি প্রতি কেজিতে নিচ্ছে অথচ এটা মনিটরিং করার কেউ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়েই চুপ আছে সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা শহিদুল ইসলাম একজন গার্মেন্টস কর্মী। ব্রয়লার মুরগি কেনার পর দাম বিষয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, অন্য কোনো মুরগি তো অতিরিক্ত দামের কারণে কিনে খেতে পারি না। আমাদের মতো মানুষরা মুরগি কিনলে এই ব্রয়লার মুরগি কিনে। কিন্তু বর্তমান বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও বেশি। অন্যদের কাছে শুনেছিলাম ব্রয়লার মুরগির দাম কমিয়েছে সরকার, কিন্তু বাজারে এসে তো বাড়তি দামেই আমাকে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হলো।
মুরগির দাম বাড়তি বিষয়ে রামপুরা বাজারের আব্দুল মালেক নামের এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে মুরগির চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। যে কারণে পাইকারি বাজার থেকেও আমাদের বাড়তি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। যেহেতু আমরা পাচ্ছি নামে কিনে আনছি, তাই কিছুটা বেশি দামে খুচরা বাজারে আমাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে।
দাম বাড়তির একটি দেখিয়ে তিনি বলেন, গত কিছুদিন আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ার কারণে অনেক খামারে প্রচুর পরিমাণে মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে বর্তমানে মুরগি সরবরাহে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে চাহিদার তুলনায়। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ তুলনামূলক কম সে কারণেই মুরগির দাম একটু বাড়তি যাচ্ছে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ছাড়াও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েটস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ১৯ দিনেও মূল্য নির্ধারণের কার্যকারিতা বাজারে দেখা যায়নি।