ইংল্যান্ডে নতুন করোনাভাইরাস লকডাউনের সময় অনুমোদিত কারণ ছাড়া সবার ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এই লকডাউন মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে সব ধরণের স্কুল এবং কলেজ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্যই বন্ধ থাকবে এবং ঘরে বসে শিক্ষার বিষয়টি আবার চালু হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের নতুন নিয়মকানুনে যা থাকছে:
নতুন নিয়মের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সরকার ২২ পৃষ্ঠার একটি প্রকাশনা বের করেছে।
করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং রোগীর সংখ্যা দুটোই যখন বাড়ছে তখন বরিস জনসন সতর্ক করে বলেছেন যে আসছে কয়েক সপ্তাহ “এ পর্যন্ত কঠিনতম সময়” হতে পারে। তিনি বলেছেন যে, টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্বের তালিকায় থাকা চারটি গ্রুপকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হবে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে।
কেয়ার হোমে থাকা সব বাসিন্দা এবং তাদের পরিচর্যার কাজ করা কর্মীরা, ৭০ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী, সম্মুখ সারিতে থাকা সব স্বাস্থ্যকর্মী এবং সমাজসেবা কর্মী এবং যারা স্বাস্থ্যগত কারণে প্রচণ্ড ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদেরকে মধ্য ফেব্রুয়ারি নাগাদ এক ডোজ করে টিকা দেয়া হবে।
ডাউনিং স্ট্রিট থেকে মি. জনসন জনগণকে নতুন জারি হওয়া লকডাউনের নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানান। বুধবার সকাল থেকে এই নিয়মগুলো আইনে পরিণত হবে। খবর বিবিসি।
ইংল্যান্ডের নতুন জারি করা নির্দেশনাগুলো অন্তত মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, বলেছেন মি. জনসন। তিনি বলেন, ভাইরাসটির অত্যন্ত সংক্রামক নতুন একটি ভ্যারিয়ান্ট যুক্তরাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, দেশটি এই লড়াইয়ের সবশেষ ধাপ পার করছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালগুলো “কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে যেকোন সময়ের তুলনায় এখন সবচেয়ে চাপের মুখে রয়ছে।”
মহামারি শুরুর দিকে যে শ্লোগান ছিল অর্থাৎ “ঘরে থাকুন, এনএইচএস এবং জীবন রক্ষা করুন” সেটির উপর আবারো জোর দেন তিনি।
সোমবার যুক্তরাজ্যে টানা সাত দিনের মতো নতুন করে ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া ২৮ দিনে আরো ৫৮ হাজার ৭৮৪ জন নতুন করে শনাক্ত হওয়ার এবং ৪০৭ জন মৃত ব্যক্তির করোনা টেস্ট পজিটিভ এসেছে বলেও জানানো হয়েছে। যদিও স্কটল্যান্ডের হিসাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ২৬ হাজার ৬২৬ জন ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যা সপ্তাহের ব্যবধানের হিসাব অনুযায়ী ৩০% বেশি এবং এটি নতুন রেকর্ড।
মি. জনসন বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতো বছর শেষের পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত না হলেও এ বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা ঘোষণা করা হবে।
বুধবার নতুন নির্দেশনার বিষয়ে ভোট দিতে প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠিয়েছে হাউজ অব কমন্স।
লেবার নেতা স্যার কেইর স্টারমার বলেন, তার দলের এমপিরা নতুন পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন দেবে যাতে করে “আমরা সবাই মিলে এটিকে সফল করতে পারি।”
যুক্তরাজ্যের মেডিকেল কর্মকর্তারা দেশটিতে কোভিডের সতর্কতার মাত্রা পঞ্চম ধাপে অর্থাৎ সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাড়ানোর পরামর্শ দেয়ার পর এমন বক্তব্য দিলেন মি. জনসন।
এক যৌথ বিবৃতিতে মেডিকেল কর্মকর্তারা জানিয়েছে যে, পঞ্চম ধাপ বা লেভেল ফাইভ বলতে বোঝায় যে, শিগগিরই এনএইচএস বা জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা কর্তৃপক্ষ নতুন করে আক্রান্ত রোগী সামাল দিতে অপারগ হয়ে পড়বে।
স্কটল্যান্ডে কঠোর নিয়ম আরোপের পর ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন বলেন: “এটা বললে মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না যে, গত বছরের মার্চের পর বর্তমান সময়টায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছি।”
যুক্তরাজ্যে ৮২ বছর বয়সী একজনকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রথমবারের মতো দেয়ার পর মি. জনসন টিকাদানের বিষয়ে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন।
ভ্যাকসিন মিনিস্টার নাধিম জাওয়ায়ী বলেন, ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা ১৩.৯ মিলিয়ন মানুষকে টিকা দেয়া হবে।