নিজস্ব প্রতিনিধি: বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা। এবার স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষার শীর্ষ দশে নাম লিখালেন তিন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী৷ গত ২০ শে সেপ্টেম্বর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাদের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে স্নাতক মেধা তালিকার ফলাফল প্রকাশ করে তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছে৷
পেইজটির তথ্যমতে ২০২২-২০২৩ ইং শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক থিওলজি ফ্যাকাল্টির হাদিস ও উলূমুল হাদিস ডিপার্টমেন্টের স্নাতক চার বছরের সমষ্টিগত ফলাফলে সকল বিদেশী শিক্ষার্থীদের মাঝে সেরা দশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের তিন মেধাবী শিক্ষার্থী৷ আল-আজহারের প্রতিটি শিক্ষাস্তরে অভূতপূর্ব সাফল্য মণ্ডিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা৷ সেই ধারাবাহিকতায় হাদিস ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এ সাফল্য বাংলাদেশের প্রাপ্তির তালিকায় এক গৌরবময় সংযোজন।
স্নাতক সেরা দশে জায়গা করে নেওয়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা হলো: ১. পাবনা জেলার গোলাম মোস্তফার সন্তান মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম৷ গড় নাম্বার: ৯০%, মেধা স্থান: দ্বিতীয়৷ ২. ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আব্দুল হামিদের সন্তান জাফর উল্লাহ৷ গড় নাম্বার : ৯০%, মেধা স্থান : তৃতীয়৷ ৩. কুমিল্লা জেলার মাওলানা আবুল বাশারের সন্তান মুহাম্মদ আব্দুস সালাম৷ গড় নাম্বার: ৮৭.৪৫%, মেধা স্থান: ষষ্ঠ৷ তাছাড়াও ২০২২-২৩ শিক্ষা বর্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (সানুভি) পরীক্ষায় সেরা দশের ৭জনেই ছিল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মিশরের ইমাম ও শাইখুল আজহার ড. আহমাদ আত- তাইয়্যাব বিদেশী ছাত্রদের শিক্ষা অর্জনের জন্য স্বদেশ ত্যাগ ও সার্বিক মেহনত-মুজাহাদার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সফলতা কামনা করে বলেন, আমি আশা করছি তারা সকলেই নিজেদের দেশে ফিরে আল-আজহারের প্রতিনিধিত্ব করবে।
শুক্রবার মিশরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইত্তেহাদ’এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই গৌরবময় ফলাফলের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশী কারো সফলতার কথা শুনলে গর্বে বুক ভরে যায়। আমি কৃতী শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম তার সফলতার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, সর্বপ্রথম আমি শুকরিয়া আদায় করছি সেই মহান রবের যার অশেষ কৃপায় এই অর্জন৷ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি পিতা-মাতা ও উস্তাদগণ ও সেই সব প্রিয়জনদের প্রতি যারা আমাকে আমার লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছতে সার্বিকভাবে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, জীবনের এই অর্জন মোটেই কাঙ্খিত লক্ষ্যবস্তু নয় তবে জীবনের পরবর্তি ধাপ গুলোর জন্য এটা অনুপ্রেরণা৷ মেধাবী এই তরুণের স্বপ্ন তিনি দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য খেদমত করবেন। মেধা তালিকার তৃতীয় স্থানের অধিকারী শিক্ষার্থী জাফর উল্লাহ বলেন, আমি আমার এই সফলতার জন্য মহান রবের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। পাশাপাশি আমার পরিবার, দেশ-বিদেশের সকল শিক্ষকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যাদের সহযোগিতায় আমি আজ এ পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছি৷ বিশেষভাবে স্মরণ করছি শরিফ উদ্দিন আব্দুল মান্নান ভাইয়ের সহযোগিতার কথা যিনি আমাকে আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ব্যাপারে অনেক সহযোগিতা করেছেন৷ পরিশেষে আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেন দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য কাজ করতে পারি৷
মেধা তালিকার ষষ্ঠ স্থানের অধিকারী শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, মিশর ও আল আজহারে আমার শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য ছিল, আরবি ও ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক এখানকার চর্চা ও কার্যক্রম গুলো কাছে থেকে দেখা এবং যথাসম্ভব উপকৃত হওয়া। তাই বিগত চার বছরে যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি, তার জন্য এবং ভালো ফলাফলের সাথে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে পারায় মহান আল্লাহর শোকর আদায় করছি৷ আরও শুকরিয়া জানাচ্ছি আমার মা বাবা, শিক্ষকবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জনদের। সাথে সাথে নবীনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, একাডেমিক ফলাফলের সাথে শাস্ত্রীয় অধ্যয়নের প্রতিও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।