বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নাগরিকদের কাছে ইউরোপ পছন্দের গন্তব্যস্থল। বিশেষত উচ্চশিক্ষা, উন্নত জীবনের প্রত্যাশা কিংবা জীবিকার তাগিদে প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমান। বলাবাহুল্য, অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় ইউরোপ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধিশালী।
তবে ইউরোপেও এমন অনেক দেশ আছে যেগুলো আর্থিকভাবে তেমন একটা সচ্ছল নয়, জিডিপি কিংবা পার ক্যাপিটা ইনকামের দিক থেকে এসব দেশ অনেক পিছিয়ে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চোখে ইউরোপের সংজ্ঞা যে রকম, এসব দেশ তার থেকে একেবারে ভিন্ন। হয়তোবা এসব দেশ পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর কাতারে নেই, তবে গড়পড়তা ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের তুলনায় এসব দেশ অনেকটা অনগ্রসর।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো একেবারে পশ্চাৎপদ। একটা সময় পূর্ব ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব দেশ থেকে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটলেও পুরোপুরি এসব দেশ অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
আজ আমরা জানার চেষ্টা করব এমন ১০টি দেশ সম্পর্কে যেগুলোর গড় আয় কিংবা জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে হিসাব করলে এদের ইউরোপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ বললেও ভুল হবে না। গড় হিসাবে এসব দেশের সাধারণ মানুষের মাসিক আয় ২৫০ ইউরোর কাছাকাছি।
মলদোভা
ইউরোপে সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রের তকমা পেয়েছে মলদোভা। পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত দেশটি একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র, যার পশ্চিমে রয়েছে রোমানিয়া এবং উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ-এ তিন দিক বরাবর রয়েছে ইউক্রেন। ছিসনাউ দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। মলদোভা একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এবং নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত মলদোভা ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলগুলোর একটি।
১৯৯১ সালে ইউএসএসআরের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে মলদোভা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তবে সমাজতান্ত্রিক কাঠামো থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশটির শিল্প ক্ষেত্রে।
অনুন্নত অবকাঠামো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতি দেশটির প্রায় নিত্যদিনের সঙ্গী। পার ক্যাপিটা হিসাবে মলদোভার বর্তমান জিডিপি ১ হাজার ৬৭৯ ইউএস ডলার, যা ইউরোপের মধ্যে সর্বনিম্ন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশটির শতকরা ১৩ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
ইউক্রেন
ইউক্রেনের নাম শুনলে আমাদের চোখের সামনে সবার প্রথমে ভেসে ওঠে আন্দ্রি শেভোচেঙ্কোর নাম, একসময় তার পায়ের জাদুতে মুখরিত ছিল গোটা ইউরোপের ফুটবল। ২০০৪ সালে ফিফার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জেতা আন্দ্রি শেভোচেঙ্কোর জন্ম ইউক্রেনে। ফ্রান্সের পর ইউক্রেন আয়তনে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ইউক্রেনে ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
১৯৯১ সালে মলদোভার মতো ইউক্রেনও ইউএসএসআরের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করে। অবকাঠামোগত দিক থেকে ইউক্রেন এখনো অনেক পিছিয়ে এবং দেশটিতে দুর্নীতির মাত্রা প্রবল।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার দখল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায় ইউক্রেন, যা দেশটির অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটিতে আরও একটি প্রধান সমস্যা। পার ক্যাপিটা হিসাবে ইউক্রেনের বর্তমান জিডিপির পরিমাণ ২ হাজার ১৩৩ ইউএস ডলার, যা ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
কসোভো
কসোভো ইউরোপে বিতর্কিত অঞ্চলগুলার মধ্যে একটি। ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে কসোভো একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তবে জাতিসংঘ কসোভোকে এখনো পরিপূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি। কসোভোর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী দেশটিতে বেকারত্বের হার ৩৪.৮ শতাংশ এবং পার ক্যাপিটা হিসাবে কসোভোর জিডিপির পরিমাণ ৩ হাজার ৮৯৩ ইউএস ডলার।
আলবেনিয়া
আলবেনিয়া গোটা ইউরোপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ইতিহাসের অন্যতম সমালোচিত রাষ্ট্রনায়ক এনভার হেক্সা ছিলেন আলবেনিয়ার একসময়কার রাষ্ট্রপ্রধান। আড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী দেশটি বলকান পর্বতমালার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ও বিভিন্ন দুর্গ এবং বাঙ্কারের জন্য পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত।
১৯৪১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আলবেনিয়াতে কমিউনিস্ট শাসনের প্রচলন ছিল এবং বলাবাহুল্য, এ সুদীর্ঘ সময় আলবেনিয়া ছিল আজকের দিনের উত্তর কোরিয়ার মতো গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দেশ।
পার ক্যাপিটা হিসাবে আলবেনিয়ার জিডিপির পরিমাণ ৪ হাজার ৫৩৭ ইউএস ডলার। যদিও আলবেনিয়া ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একটি, তবে দেশটিতে খনিজ তেল, জ্বালানি গ্যাস, কয়লা, লোহার আকরিক, চুনাপাথরসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস রয়েছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা
১৯৯২ সালে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। কসোভোর মতো দেশটি এখনো যুগোস্লাভ যুদ্ধের বিভীষিকা বহন করে চলছে। অবকাঠামোগত দিক থেকে দেশটি বেশ অনুন্নত, সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে যুক্ত হয়েছে উদ্বাস্তু সমস্যা। পার ক্যাপিটা হিসাবে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার জিডিপির পরিমাণ ৫ হাজার ৬৪৭ ইউএস ডলার।
স্বাধীনতার পর দেশটির সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করে কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশটি সেভাবে অগ্রসর হতে পারেনি। কাগজে-কলমে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হলেও বাস্তবিকভাবে দেশটিতে তিনটি ভিন্ন মতাদর্শের সরকার রয়েছে।
মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে বসনিয়ানদের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলেও সার্ব-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে তাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই। একই অবস্থা ক্রোয়েট সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে। প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষই তাদের নিজস্ব জাতিসত্তার সরকার দ্বারা পরিচালিত হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, যার দরুন দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে বেশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।
মেসিডোনিয়া
বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ৯ হাজার ৯২৭ বর্গমাইলের ছোট্ট একটি দেশ মেসিডোনিয়া। প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত দেশটি উত্তরে সার্বিয়া, উত্তর-পশ্চিমে কসোভো, পশ্চিমে আলবেনিয়া, পূর্বে বুলগেরিয়া ও দক্ষিণে গ্রিসের সঙ্গে সংযুক্ত। ১৯৯২ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে আলাদা হয়ে মেসিডোনিয়া এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটির অন্যতম তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত মেসিডোনিয়ার রাজধানীর নাম স্কুপিয়ে। পার ক্যাপিটা হিসাবে দেশটির জিডিপির পরিমাণ ৫ হাজার ৪৪২ ইউএস ডলার। বেকারত্বের সমস্যা দেশটিতে প্রবল এবং সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশটির বেকারত্বের হার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মেসিডোনিয়ার শতকরা ২১ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
সার্বিয়া
ইউরোপের সার্বিয়ার পরিচিতি এক খলনায়ক হিসেবে। পার ক্যাপিটা হিসাবে সার্বিয়ার জিডিপির পরিমাণ ৫ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার, যা গোটা ইউরোপের মধ্যে সপ্তম সর্বনিম্ন। অথচ যুগোস্লাভিয়া যুগে সার্বিয়া ছিল ইউরোপের সবচেয়ে প্রগতিশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডকে একসময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্তমান প্রশাসনিক রাজধানী ব্রাসেলসের সঙ্গে তুলনা করা হতো।
সে সময় বেলগ্রেডকে ইউরোপের সেরা শহরগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সার্বিয়াতে দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতার মাত্রা অনেক বেশি। এ ছাড়া ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি দেশটির অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী দেশটির শতকরা ২০ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
বেলারুশ
বেলারুশ পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত ৮০ হাজার ২০০ বর্গমাইলের একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী দেশটির মোট জনসংখ্যা ৯০ লাখের কিছু বেশি। বেলারুশ দক্ষিণে ইউক্রেন, পশ্চিমে পোল্যান্ড, পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তর-পশ্চিমে লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। ১৯৯১ সালে ইউএসএসআরের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বেলারুশের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও দেশটি এখনো পুরোপুরি রাশিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
১৯৯৪ সাল থেকে আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো একচেটিয়াভাবে দেশটি শাসন করে আসছেন। বিশ্ব মানবাধিকার সূচকে বেলারুশের অবস্থান এখনো আশানুরূপ নয়, এমনকি দেশটির গণমাধ্যমও ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো সে অর্থে স্বাধীন নয়। একই সঙ্গে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রাও অত্যন্ত প্রবল। পার ক্যাপিটা হিসাবে বেলারুশের জিডিপির পরিমাণ ৬ হাজার ২৮৩ ইউএস ডলার।
মন্টিনিগ্রো
আড্রিয়াটিক সাগরের তীরে অবস্থিত মন্টিনিগ্রো বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটি। ২০০৬ সালে মন্টিনিগ্রো সার্বিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কবি লর্ড বাইরেন মন্টিনিগ্রোকে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। পার ক্যাপিটা হিসাবে মন্টিনিগ্রোর জিডিপির পরিমাণ ৭ হাজার ৬৬৯ ইউএস ডলার।
দেশটির অর্থনীতি মূলত এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে নগরায়ণের ফলে দেশটিতে ব্যাপক পরিমাণে বন-জঙ্গল ধ্বংস করা হয়েছে, যার কারণে দেশটিতে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে।
এ ছাড়া দেশটিতে লিঙ্গ এবং বয়সভিত্তিক বৈষম্য প্রবল, যার প্রভাব অনেক সময় দৈনিক আয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। বিগত কয়েক বছরে দেশটিতে উদ্বাস্তু সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের জনগণনা অনুযায়ী মন্টিনিগ্রোর মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ২২ হাজার ১৮২ জন, যার মধ্যে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি। মন্টিনিগ্রোর মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
বুলগেরিয়া
পার ক্যাপিটা হিসাবে বুলগেরিয়ার জিডিপির পরিমাণ ৮ হাজার ৩১ ইউএস ডলার, যা ইউরোপের মধ্যে দশম সর্বনিম্ন। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া দেশটির নামও বুলগেরিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে কমিউনিজমভিত্তিক শাসনব্যবস্থার প্রচলন ছিল।
১৯৯০ সালের ১৫ নভেম্বর গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক আধুনিক বুলগেরিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে রূপান্তর বুলগেরিয়ার জন্য প্রথম দিকে সুখপ্রদ হয়নি। কমিউনিস্ট সরকারের পতন এবং সোভিয়েত বাজারে বুলগেরিয়ান পণ্যের বিলোপ ঘটায় দেশটির অর্থনীতির প্রবল সংকোচন ঘটে।
মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের ঊর্ধ্বগতি, অবারিত দুর্নীতি এবং সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটায় জীবনযাত্রার মানের চরম পতন ঘটে। অনেক বুলগেরিয়ান দেশ ছেড়ে চলে যান। তবে দেশটির সরকার কর্তৃক নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে গৃহীত সংস্কারগুলোর ব্যাপারে অটল থাকলে ধীরে ধীরে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হয়।
২০০১ সাল থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক-সব দিক থেকে বুলগেরিয়া উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। বর্তমানে তাই আন্তর্জাতিক মানব উন্নয়ন সূচকে বুলগেরিয়ার অবস্থান ৫৬ তম। ২০০৭ সালে বুলগেরিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে, দেশটির মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪১ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমারেখার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে এবং শতকরা ১০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।