1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

এশিয়াজুড়ে কণ্ঠরোধ হচ্ছে সমালোচক সাংবাদিকদের: দ্য ইকোনমিস্ট

  • Update Time : বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০
  • ২০৯ Time View

দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ করোনাভাইরাস মহামারি এশিয়াসহ সারা বিশ্বেই বিভিন্ন অপপ্রচার, ফেক নিউজ ও গুজব প্রচার ছড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের এই যুগে তা ছড়াচ্ছে অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায়।  দুর্যোগকালীন এমন সময়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে গুজব ছড়ায়। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এমনিতেই গর্ব করার মতো নয়। এখন এই মহামারির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার সমালোচক সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করছে বলে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনে একটি টিভি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। ৫ মে সন্ধ্যা সাতটা ৫২ মিনিটে দেশটির সবচেয়ে বড় সম্প্রচার-মাধ্যম এবিএস-সিবিএন-এর সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। দৃশ্যত প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুয়ার্তের সঙ্গে কয়েক বছরের বিরোধের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে সাময়িকভাবে কোম্পানিটির লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দুয়ার্তের প্রশাসন। আর দুয়ার্তের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস কোম্পানিটির ২৫ বছর মেয়াদের লাইসেন্স নবায়নে মাসের পর মাস টেনে নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট হয়তো এবিএস-সিবিএন’কে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত সম্প্রচার চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। তবুও সাংবাদিক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কাছে পরিষ্কারভাবে এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে, সরকারের কঠোর সমালোচনার পরিণাম কী হতে পারে।

ফিলিপাইনের এই ঘটনা এশিয়ার সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিস্মিত করবে না। পুরো মহাদেশেই সরকারি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার, ওয়ারেন্ট ছাড়াই ট্যাক্স তদন্ত, ভুয়া অপরাধের অভিযোগ, ফেক নিউজ প্রচারণা, অনলাইন ট্রলসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের চাপ রয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের মতে, ২০১৮ সাল থেকে এশিয়ার ১২টিরও বেশি দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইন। সংস্থাটি ১৮০টি দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতার যে সূচক প্রকাশ করে তার মধ্যে সবচেয়ে নিপীড়ক দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ এশিয়ার। তালিকার তলানিতে উত্তর কোরিয়া, তুর্কমেনিস্তান (১৭৯তম), চীন (১৭৭তম) ও ভিয়েতনাম (১৭৫তম)।

যেসব দেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে, সেসব দেশে কখনোই এর খুব বেশি ঐতিহ্য ছিল না। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান সেন প্রায় ৪০ বছর আগে গণহত্যাকারী খেমার রুজ শাসনের পতন পর থেকেই ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক তৎপরতা ধারাবাহিকভাবে ঠেকিয়ে গেছেন তিনি। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বেশ কয়েকটি স্বাধীন রেডিও চ্যানেল এবং একটি সমালোচনামূলক পত্রিকা কম্বোডিয়া ডেইলি বন্ধ করে দেওয়া ছিল কেবল একটি বৃহত্তর তৎপরতার অংশ। এই তৎপরতায় দেশটির প্রধান বিরোধী দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একইভাবে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ কয়েক দশকের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের উত্তরাধিকার রাতারাতি পাল্টে ফেলবে তা আশা করা খুব বেশি হয়ে যায়। গত চার বছরে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী তাদের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ৫২টি মামলা দায়ের করেছে। এর অর্ধেকের বেশি দায়ের হয়েছে কেবল গত এক বছরেই। সেনাবাহিনীর হাতে বেসামরিক নাগরিক হত্যার তথ্য উন্মোচন করে এক বছরের বেশি কারাদণ্ড ভোগ করেছেন ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। অন্যদিকে দায়ী সেনা সদস্যরা তাদের চেয়েও কম সময় কারাগারে কাটিয়েছে।

ভয়ের আরও কারণ হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারগুলোর আচরণ আরও বেশি কঠোর হয়ে উঠছে। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সমালোচকরা ঘরে এবং বাইরে ভীতি ও হামলার শিকার হচ্ছেন। দেশটির জনপ্রিয় চ্যানেল জিও টিভির সম্প্রচার ২০১৮ সালে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকে। ক্যাবল অপারেটররা রহস্যজনক কারণে এই সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় সরকারের ভূমিকা খুবই সামান্য, বিশেষ করে দেশটিতে সক্রিয় ইসলামি উগ্রবাদীদের থেকে তাদের সুরক্ষার প্রশ্নে। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে পাকিস্তানে ৩৩ জন সাংবাদিক খুন হলেও কোনও হত্যাকাণ্ডের জন্য কারো শাস্তি হয়নি। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাতেও তদন্তে অবহেলার কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

আশঙ্কার বিষয় হলো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার দীর্ঘ ইতিহাস থাকা দেশগুলো এখন সাংবাদিকদের অগ্রাহ্য করা শুরু করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেই চান না। তিনি কেবল দূরেই থাকেন না, তার আচরণগুলোও বিরোধপূর্ণ। ফলে সরকারের সমালোচনার কারণে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকেরাও মামলা দায়ের অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে। যেমন, ৮ জুন এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়ার এক বিবৃতিতে দিল্লি পুলিশের এক তদন্তের নিন্দা জানানো হয়। এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মোদির দলের মুখপাত্রের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তদন্ত শুরু হয়। মোদির ট্রল আর্মি সমালোচক রিপোর্টারদের অনলাইনে আক্রমণ চালিয়ে থাকে। প্রায়ই এসব সাংবাদিকদের ঠিকানা কিংবা অন্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে দেওয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঘটনায় তদন্ত চালানো সাংবাদিক রানা আইয়ুবের মুখমণ্ডল কেটে পর্নো ভিডিওতে জুড়ে দেওয়া হয়। আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের হুমকির কথা তো বাদই থাকলো।

বাণিজ্যিক চাপও আছে। বন্ধু নয়, এমন সংবাদপত্রগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন পায় না। আর সেকারণে বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদপত্রের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নিতে চাপ দেওয়ার সুযোগ পায়।

কোভিড-১৯ মহামারি এশিয়ার সরকারগুলোকে সাংবাদিকদের ওপর চাপ প্রয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে। রোগটি নিয়ে মিথ্যা ছড়ানোর অভিযোগে ৫১ জনকে গ্রেফতার করেছে ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়াতেও মহামারি নিয়ে ফেক নিউজ ছড়ানোর অভিযোগে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে ২৯ ব্যক্তিকে। রোগ নিয়ন্ত্রণে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াতে জারি করা জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সরকার সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে।

ভারতে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনাবিরোধী লড়াইয়ের সময় সাংবাদিকদের ইতিবাচক খবর প্রচারে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। মুম্বাই পুলিশের ভূমিকা আরও এগিয়ে। তারা করোনা মোকাবিলায় ‘সরকারি ভূমিকায় অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে’ এমন কোনও কিছু প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে আদেশ জারি করেছে।

এই ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়েনি। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন মিলে বাখেলেট বলেছিলেন, বেশ কয়েকটি দেশ করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ‘ভিন্নমত বা অবাধ তথ্য প্রবাহ ও বিতর্ক’ স্তব্ধ করছে। অনেক দেশই তার সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছে। ভারত, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামসহ আটটি দেশ পাল্টা জানিয়েছে, ‘মহামারিতে অসাধারণ ও অভূতপূর্ব পদক্ষেপ প্রয়োজন হয়’। সত্যি, সংবাদমাধ্যমের প্রকৃত ভূমিকার ক্ষেত্রে এই তিন দেশ নিজেদের অসাধারণ ও অভূতপূর্ব হিসেবেই দেখতে পাবে। দুঃখজনক হলেও প্রত্যাশিত যে, সরকারগুলোর জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার মতো সংবাদমাধ্যম না থাকার ফলে মহামারি মোকাবিলা অনেক খারাপ হবে, অন্যথায় দেশগুলো আরও ভালো করতে পারত।

ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..