নিজস্ব প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জ পৌর শহরে নির্মল হাওয়ায় খানিকটা সুন্দর সময় অতিবাহিত করার একটি উল্লেখ্যযোগ্য ও দর্শনীয় স্থান কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা লেকসিটির গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ। নগর জীবনের ক্লান্তি এড়াতে মুক্তমঞ্চের আশপাশের এলাকাজুড়ে সকাল থেকে রাত অবধি হাজার হাজার লোক ভিড় করে। এ জনসমাগমকে পুঁজি করে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে রেস্তোরাসহ শত শত অবৈধ দোকান। চলছে দেদারছে ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কিছু অসাধু কর্মচারী দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এসব দোকান ভাড়া দিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিটি দোকান স্থাপন ও স্থানান্তর করার সময় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয় । দোকান ভাড়া দিয়ে সবমিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নরসুন্দা লেক সিটির মুক্তমঞ্চে গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকান। দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোও দোকানদারদের দখলে। দোকান থেকে কিছু না কিনে এসব বেঞ্চে লোকজন বসতে সাধারণ জনগণকে হয়রানির শিকার হতে হয় । কয়েক গজের মধ্য একই খাদ্য পণ্যের ভিন্ন ভিন্ন মূল্য। পণ্যের মূল্য নিয়ে কথা বললেই অপমান অপদস্ত হতে হয় দর্শনার্থীদের। খাবার খেয়ে পানি চাইলেও দর্শনার্থীদের সাথে করে চরম দুর্ব্যবহার নিত্য ঘটনা।
নৈরাজ্যের চরম সীমায় রয়েছে গুরুদয়াল কলেজ সংলগ্ন এই মুক্তমঞ্চ এলাকা। নেই কোনো নিয়ম নীতি। যে যেভাবে পারছে মানুষের পকেট কাটছে। এয়াড়া প্রায় প্রতিটি দোকানেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। শত শত দোকানপাটের টনকে টন বর্জ্য নদীসহ কলেজ মাঠে ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। নির্মল এলাকাটি দূশনের শিকার হয়ে ক্রমেই হয়ে যাচ্ছে অস্বাস্থ্যকর।
এদিকে বখাটে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব যেন নিত্যসঙ্গী এই মুক্তমঞ্চে। পরিবার পরিজন নিয়ে আসা দর্শনার্থীরা প্রায়ই ছিনতাই ও মারধরের শিকার হচ্ছেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিনত হয়েছে এ মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকাটি। সবকিছুই আর্বতিত হচ্ছে মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠা শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ঘিরে।
মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সুমন, কামরুজ্জামান, হুমায়ুন, ফারুক, ফারহানা, ইসরাত, ফারজানাসহ আরও অনেকেই বলেন, এখানে আমরা আসি একটু মুক্ত হাওয়া নিতে কিন্তু অবৈধ দোকানপাটের কারণে নিজের মত করে চলাচল করতে পারি না। বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য যে দোলনা, স্লিপার রয়েছে তাও দোকানপাট দিয়ে ঘেরা। বাচ্চারা খেলতেও পারে না। বসার বেঞ্চগুলো দোকানিরা দখল করে রেখেছে, ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসতেও পারে না। মুক্তমঞ্চের রেলিংয়ের পাইপগুলোও কেটে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানী বলেন, প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আমরা গরিব মানুষ। কর্ম করেইতো সংসার চালাই। চুরি ডাকাতিতো করছি না।
মুক্তমঞ্চ শরীর চর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ আবু হাসান বাবুল বলেন, সবুজের সমারোহ থাকার কথা ছিল মুক্তমঞ্চে কিন্তু শত শত দোকানপাট গড়ে উঠার কারণে সবুজের ছিটাফোঁটাও নেই। নির্মল হাওয়া আমরা পাইনা। যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে উঠেছে। আমি কিশোরগঞ্জবাসী হিসেবে এটা মানতে পারি না। এছাড়া দোকানপাটের সব বর্জ্য নরসুন্দা নদীতে ফেলা হয়। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমাদের শরীরচর্চা করতে হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল, গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চে চিত্তবিনোদনের জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল কিন্তু যত্রতত্র অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠায় বসা ও হাঁটার জায়গাও দখল হয়ে গেছে। নির্মল পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি দোকানপাটের বর্জ্য যত্রতত্র ও নদীতে ফেলায় অত্র এলাকার পরিবেশ মারাত্নক হুমকি সম্মুখীন।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ পারভেজ মিয়া বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব রেখেছি আখড়া বাজার ব্রিজ থেকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্রিজ পর্যন্ত আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হউক। এখন পর্যন্ত তা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ বিল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিল পৌরসভাই পরিশোধ করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে অবশ্যই এসব দোকান উচ্ছেদ করা হবে।