প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক :
সরকারিভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশে বেড়েছে ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহার। বাজারে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যাচ্ছে। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারের তুলনায় এই চুলায় খরচ কম। ইলেকট্রিক চুলা জনপ্রিয় হওয়ার এটিও আরেকটি কারণ। এ অবস্থায় বিদ্যুতের ব্যবহারও কিছুটা বেড়েছেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আমাদের এখন অনেক ভালো। তাই বিদ্যুতের ওপরে চাপ পড়বে না। বরং এ ধরনের চুলা যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় তাহলে এর ব্যবহার উৎসাহিত করা যেতে পারে।
দেশে রান্নাঘরের জ্বালানি হিসেবে পাইপ লাইনের গ্যাশের পাশাপাশি বোতলজাত পেট্রোলিয়াম গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বাইরে কাঠের চুলা ও ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহার হচ্ছে। এখন পাইপ লাইনের গ্যাসের সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ বিকল্পর দিকে ঝুঁকছে। সহজলভ্য ও নিরাপদ বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ইলেকট্রিক চুলা।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বসবাসকারী এক গৃহিনী জানান, তিনি একটি নতুন ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। এই ফ্ল্যাটে শুরু থেকেই গ্যাস নেই। ফলে তার রান্নার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে ইলেকট্রিক চুলা বা ইনডাকশন ওভেনের ওপর। এতে খরচ কেমন জানতে চাইলে বলেন, সব রান্না করলেও মাসে ৫০০ টাকার বেশি বিল আসে না। অন্যদিকে একই পরিমাণ রান্নার জন্য এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকার এলপিজি প্রয়োজন হয়। তবে এটি একটি গড় হিসাব। এটি নির্ভর করে মূলত রান্নার পরিমাণের ওপর।
চার-পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের সব ধরনের রান্নার কাজ চালানোর জন্য মাসে দুটি সিলিন্ডারের প্রয়োজন হতে পারে। যার দাম কমপক্ষে দুই হাজার টাকা। অন্যদিকে একটি দুই চুলার পাইপ লাইনের গ্যাসের বিল ৯৫০ টাকা। ঠিক তার বিপরীতে ৫০০ টাকা দিয়ে ইলেকট্রিক চুলায় রান্না খরচ বাঁচায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইলেকট্রিক চুলার ব্যবহার বিষয়ে তাদের কোনও মনিটরিং নেই। এখানে কে কীভাবে রান্না ঘরের জ্বালানির প্রয়োজন মেটাচ্ছেন সেটি একান্ত ব্যক্তি নিজেই ঠিক করছেন। এক্ষেত্রে কেউ যদি মনে করেন ইলেকট্রিক চুলায় সাশ্রয়ী, তাহলে তিনি সেটা ব্যবহার করতে পারেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনও বিধি নিষেধ নেই।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন, দেশের বাইরে এখন ব্যাপকভাবে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের এখানেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জ্বালানি সংকট রয়েছে, তাই এ ধরনের নতুন নতুন প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করতে পারি।
ইনডাকশন চুলার ওপরে টেম্পার্ড গ্লাস থাকে। এতে আগুনের কোনও ভয় নেই। আবার বৈদ্যুতিক শকেরও সৃষ্টি হয় না। এ ধরনের চুলায় কালি পড়ে না। আবার সব ধরনের রান্নাও করা যায়। বাজারে যেসব বৈদ্যুতিক চুলা রয়েছে সেগুলোর কোনও কোনোটিতে শুধু নির্দিষ্ট ধরনের হাড়ি ব্যবহার করতে হয়। আবার কোনও কোনোটিতে সব ধরনের হাড়ি ব্যবহার করা যায়।
দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, ভিশনের ইলেকট্রিক চুলা রয়েছে বাজারে। এছাড়া মিয়াকো, সিঙ্গার, কংকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চুলা পাওয়া যায়। তিন হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের এসব চুলা পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের চুলার জন্য সাধারণত দুই হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বাইরে এ ধরনের চুলার ব্যবহার অনেক বেশি। যেসব বড় শহরে গ্যাস নেই, সেখানকার বাসিন্দারা এ ধরনের চুলার ওপর নির্ভর করছেন বেশি। অনেকেই তরকারি রান্না করেন ইনডাকশন ওভেনে, আর ভাত রান্না করেন রাইস কুকারে।
রাজধানীতেও এখন গ্যাস সংকট বাড়ছে। গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটাই গ্যাস ছিল না রাজধানীর কিছু এলাকায়, গ্যাস আসলেও চাপ ছিল কম। অনেকেই এ সময়ে এই ধরনের চুলা কিনে তাদের রান্নার সমস্যার সমাধান করেছেন। এমন একজন মোহম্মদপুরের অনামিকা আলম। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্যাস নাই। প্রথমে সকালের নাস্তা কিনে এনে খেলাম। এরপর দুপুরে যখন জানতে পারলাম গ্যাস আসবে রাতে তখন ইলেকট্রিক চুলা কিনে এনে সমস্যার সমাধান করলাম। এরপর তো বুধ, বৃহস্পতি, শুক্রবারও গ্যাসের স্বল্পচাপ ছিল। ফলে এখন গ্যাসের কোনও সমস্যা হলে আমার আর সমস্যা হবে না। আর খোঁজ নিয়ে জানলাম খুব বেশি বিলও এতে আসবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘আমরা চাই বৈদ্যুতিক চুলা মানুষ ব্যবহার করুক। তবে সেটি যেন হয় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। চুলা তৈরির ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী কিনা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে মানুষ কেরোসিন বা কাঠ না পুড়িয়ে যদি বিদ্যুতের চুলায় রান্না করেন তাহলে পরিবেশেরও ক্ষতি কম হবে। এসব বিষয়গুলো এখন আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন অনেক বেশি। চাহিদার তুলনায়ও বেশি। ফলে এই বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত করে আমরা শিল্পখাতে আরও বেশি করে দিতে চাচ্ছি। পাশাপাশি যদি আবাসিকে গ্যাসের বদলে ইলেকট্রিক চুলায় সাশ্রয়ী উপায়ে রান্না করা যায় তাহলে সেটিকে আমরা উৎসাহিত করবো।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার এ ধরনের চুলা ব্যবহারের দিকে নজর দিলে বাজারে ভালো মানের চুলা আসতো। এতে বিদ্যুতর খরচ কম যেত। এতে গ্রাহকের বিল কম আসার পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচও কম হতো।
আরও পড়ুন : করোনা ঝুঁকির মধ্যেই মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধে সোয়া লাখ শিক্ষার্থী