নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থ প্রবাহ সচল রাখার উদ্দেশ্যে এ খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ আট বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। সচল এবং প্রকৃত কারণে ক্ষতিগ্রস্তরাই এ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া সুবিধাভোগীরা নতুন ঋণের আবেদন করতে পারবেন।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় বাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কারণে চামড়া খাতে বিদ্যমান ঋণ নিয়মিতভাবে পরিশোধিত না হওয়ায় কিছু কিছু ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ছে। ফলে এ খাতে স্বাভাবিক ঋণ প্রবাহ বজায় রাখা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলার অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ জুন ভিত্তিক ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নগদে আদায় সাপেক্ষে পুনঃতফসিল করার বিষয়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংকসমূহ নিজেরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে আদায়কৃত কিস্তি ডাউন পেমেন্ট হিসেবে গণ্য হবে না। গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ঋণ হিসাব শ্রেণিকৃত হয়ে থাকলে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল বা চলমান থাকলে এ সার্কুলারের আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদান করা যাবে।
কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ তলবি ও চলমান ঋণ সর্বোচ্চ ছয় বছর মেয়াদে এবং মেয়াদি ঋণ সর্বোচ্চ আট বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল করা যাবে। কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ক্রয়ের উদ্দেশ্যে নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট গ্রহণের শর্ত শিথিল করা যাবে। আগামী ৩০ জুলাই মধ্যে নিজ নিজ ব্যাংকের কাছে এ সার্কুলারের আওতায় গ্রাহকদের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করতে হবে।
সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, চামড়া শিল্প দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক রফতানিমুখী শিল্প। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং মূল্য সংযোজনের নিরিখে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। চামড়া শিল্পে সারা বছর ধরে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক যোগান আসে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহা উৎসবে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময় কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।
এদিকে চামড়া খাতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়ায় নাখোশ হয়েছেন এ খাতের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, এ সুযোগ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের পোয়াবারো হয়েছে। তারা একদিকে ঋণ নিয়ে প্রকৃত খাতে ব্যয় করেননি। আবার তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয়েছেন। আবার তাদেরই এখন ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কোনো উপকারে আসবে না। তারা চান রেয়াতি সুদে চলতি মূলধন।
কাঁচা চামড়া কিনতে প্রয়োজন হবে মূলধন। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; এর ওপর করোনার কারণে মূলধন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মূলধন জোগানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কৃলারে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ জন্য তারা দুয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করবেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কোনোভাবে লাভবান হবেন না। শুধু যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের সুবিধা হবে। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের পুঁজি দরকার।
এমনিতেই সাভারে ট্যানার্স শিল্প স্থানান্তরের জন্য তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে তারা দীর্ঘদিন ধরে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের সুদ মওকুফের সুবিধা চেয়ে আসছেন। একই সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তাদের মূলধন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে তারা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার যে সার্কুলার দিয়েছে ওই সার্কুলারে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধার কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা যাবে। কিন্তু ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার সক্ষমতা তাদের নেই। এ কারণে এ সুযোগ প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কোনো উপকারেই আসবে না। বরং দীর্ঘদিন ধরে যারা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছেন না তাদের জন্য এটা উপকারে আসবে।