প্রথম দর্শনে মনে হতেই পারে নরম সরম,খানিকটা লাজুক একটু মেয়েলি অবয়ব। অথবা অবাক হতে পারেন এটা শুনে যে, ইনিই কিন্তু অযাচিত হঠাৎ বসন্তের দমকা হাওয়ার নিরব স্রোতে হরণ করতে জানেন, মনের অজান্তেই মধ্য বয়সী রমণীর নীতিবান হৃদয়টা। আর সম্বিত ফিরে আসার আগেই হয়তো রমণীকুল ততক্ষণে, নিঃসঙ্গ অলস দুপুরে আনমনে গুনগুন করে ‘বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও’ নতুন করে আরেকবার গাইতে গাইতে আয়নায় চোখ পরতেই ঠোঁটের কোনে লাজুক হেসে, সেই পুরোনো সংসারের মায়াজালে আবারও জড়িয়ে পরবেন নিষ্পাপ অন্তরেই। আঙ্গুলে আঁচল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতেই হয়তো মনে মনে, বলবেন; যাহ, কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি …
আর সদ্য কৈশোর পেরোনো মেয়েরা,… ও বেচারীরা তো বোঝার আগেই, শরৎের আকাশ পানে চেয়ে উত্তাল মনের রহস্য খুঁজতে থাকার মাঝেই অনভুব করবে, মনের জানালার গরাদে অনাকাঙ্ক্ষিত এক মৃদু দোলা। কে যেন হঠাৎ উঁকি দিয়ে, বসন্তের একরাশ আবেগী মিষ্টি হাওয়ার রোমান্টিক সুবাসের ছোঁয়ায় সিক্ত করে দিলো কোমল হৃদয়টা। তারপর না জানিয়েই আবার দিগন্তে মিলিয়ে গেলো গোধূলি লগ্নে আগন্তুকের মত। একরাশ উদাস ভাবনার ডানা মেলে বলাকার মত তার পিছু নিতে গিয়ে অবশেষে বিষন্ন মনটা প্রথমবারের মত বিফল প্রেমের মায়াবী আঁচরে একটু ডুকরে কেঁদে বাস্তবতার ময়দানে নেমে এসে জীবনের ভিন্ন স্বপ্ন বোনায় নতুন করে আবারও মনোযোগী হবে মেঘ বালিকার দল। স্মৃতির পটে আবছা হলেও থেকে যাবে প্রতিচ্ছবিটা তার, জীবনের প্রথম ক্রাশ হয়েই চিরদিন অমলিন।
নাহ, প্রেম কাহিনী লিখতে বসিনি। মজার ব্যাপার কি জানেন, উনি নিজে যেচে পরে এই সব কোন কিছুই করেন না। এর ধারে কাছেও নেই তিনি। বরং ললনারাই যেন ডেকে আনেন মনের কোঠায় তাকে, রং বাহারি জীবনের বহুরূপী রংয়ের দোলায় রাংগাতে। কোনই অন্যায় নেই তাতে। মনতো আর হাত-পা নয় যে শরীরে বাঁধা থাকবে। ওটা উড়ে বেড়াবেই। this is natural human instinct. আমার পূর্ণ সমর্থন আছে তাতে। ওতে কোন পাপ নেই। আর উড়বেই না কেন বলেন,.. আমি নিজেই তো নারী হলে রীতিমত হরতাল ডেকে বসতাম অটোয়া শহরে গিয়ে, উনি ‘কবুল’ না বলা পর্যন্ত।
সুদর্শন মায়াবী চেহারার মানুষটাকে দেখে পুরুষেরও যে একটু আধটু ঈর্ষা হয়, সে কথা হলফ করেই বলতে পারি।
তবে না, এসবও বলার জন্যে বসিনি। বসেছি আন্তরিক কৃতজ্ঞটা প্রকাশ করতেই ওনার প্রতি পাবলিকলি। যার দূরদৃষ্টি, সহমর্মিতা, আর তড়িৎ সিদ্ধান্তের কারনেই, করোনা আক্রান্তের চ্যাম্পিয়ন দেশটার হাতের নাগালে থেকেও এখনো কঠিন সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন দিনান্ত কঠোর পরিশ্রম করেই নিজের দেশটাকে। আগলে রাখছেন জাতিটাকে পরম মমতায়। জনগন যে ভরসা করে আছেন তার মেধা, মনন আর হয়তো বাহুবল না হলেও মনোবলের দিকে তাকিয়েই। শুধু কি তাই, পনেরো বছরের উপর প্রায় সক্কলকেই আগামী চার মাস দিচ্ছেন নগত যথেষ্ট আর্থিক সাহায্য আর থামিয়ে দিয়েছেন বাড়ির লোন আর বড় বড় খরচ গুলো আপাতত। একটু আঁচড়ও লাগতে দেবেন না কাউকেই এমনই ব্রত নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন অনঢ় যুধিষ্ঠিরের মত। প্রয়োজনে কেয়ামতকে রুখে দেবে আপন সিনায়। ভাবখানা এমন যে,
“ছুঁয়েই দ্যাখনা আমার লোককে, আজকে তোর একদিন, কি আমার তিন-চাইর দিন”
নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন, আমার কিন্তু ভীষন পছন্দের একজন মানুষ। জনগনের নিখাঁদ ভালবাসাটা অর্জনের বিদ্যাটা উনি জানেন। ছিনিয়ে নেন না সেটা বীভৎস অভিশাপের অবরণের মোড়কে। বরং উপহার ভেবেই তার কাছে, খাস মনে দিলটা তুলে দেন মানুষ শ্রদ্ধা ভরা অবনত মস্তকে। ইনার বাবাও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান…. আর কেউ নন, তিনি ক্যানাডার তথা আমার প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় জাস্টিন ট্রুডো। বড্ড ভালো মানুষ আমার চোখে।
পলিটিক্সের নোংরা খাতায় যে ভাবেই তার নাম ঝাপসা কালিতে আবছা ভাবেই লেখা হোক না কেন, বিশ্ব মানবতার পান্ডুলিপিতে নামটা কিন্তু স্বর্ণাক্ষরেই খদিত হবে পূর্ণ মর্যাদায়। বহুদূর থেকেও সন্ধ্যাতারার মতই জ্বলজ্বল, ঈশান কোনে লাইট হাউস হয়েই পথ দেখাবে পৃথিবীর অনাগত দিশেহারা প্রজন্মকে, এক হয়ে কাজ করার শিক্ষায় ভবিষ্যতে যখনই ঠেকে যাবে মানব প্রজাতি।
এই মানুষগুলো কখনো পুরনো হোন না। তাই উঠতি বয়সের ছবি আঁকাটাই যৌক্তিক। চৌদ্দ ঘন্টা কাঠ পেন্সিলের সাথে যুদ্ধ করে আঁকার শেষে মন বলে, প্রাপ্যটা তার ঠিকমত পরিশোধ হলো না। তাই সংগে আমার আকুন্ঠ নির্ভেজাল শ্রদ্ধা, নিষ্কন্টক সফলতা আর সফেদ শুভ কামনা থাকলো এই লিভিং লিজেন্ডের জন্যে।
ওদিকে আজও বিশ্বাস রাখি, পরপারে যাবার আগে কোন একদিন আমার মাতৃভূমির প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও যেন এমনই গর্বভরে একবার এঁকে/ লিখে যেতে পারি। নিজে তিনি ভালো মন্দ যাই হোক না কেন, আসপাশটা তার বেজায় নোংরা এখনো।
রিয়াজ রব্বানী, টরেন্টো, ২০২০