প্রত্যয় নিউজ ডেস্কঃ কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট করায় জো বাইডেনের নির্বাচনী তহবিলের পরিমাণ শুধু বাড়েনি, জনমত জরিপেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তুলনায় ৭ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
আরো জানতে পড়ুনঃ
বৃহস্পতিবার রেজিস্টার্ড ভোটারের মধ্যে এই জরিপ চালিয়েছে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত ফক্স নিউজ। করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে দুই প্রার্থীর একজনও সরাসরি ভোট প্রার্থনায় সক্ষম না হলেও টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ চলছে নির্বাচনী এজেন্ডার আলোকে। একজন আরেকজনকে আক্রমণ করেও প্রচারণা চালাচ্ছেন এসব মাধ্যমে।
করোনা নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্পের সীমাহীন উদাসীনতায় দেড় লক্ষাধিক আমেরিকানের মৃত্যু এবং ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স’ আন্দোলনে বাইডেনের সরাসরি সমর্থনের কারণে ভোটারের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে জো বাইডেন। এজন্য তার পক্ষে সমর্থন দিন-দিনই বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন জরিপ পরিচালনাকারীরা।
বিশেষ করে চলমান বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পরিপূরক কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত করায় দল-নিরপেক্ষ ভোটারেরাও বাইডেনের প্রতি ঝুঁকছেন।
নির্বাচনের ঠিক ৮১ দিন আগে ১২ ও ১৩ আগস্ট পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। আজই যদি নির্বাচন হয় তাহলে ৪৯ শতাংশ বাইডেনকে ভোট দিতে চেয়েছে। অপরদিকে ৪২ শতাংশ বলেছেন ট্রাম্পের কথা।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশই ট্রাম্পের স্বাস্থ্যসেবা নীতির সমালোচনা করেছেন। মাত্র ৪০ শতাংশ ট্রাম্পের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছে।
৫৩ শতাংশ বলেছেন যে, ট্রাম্পের উদাসীনতা অথবা মহামারিকে আমলে না নেয়ায় এতগুলো আমেরিকানের প্রাণ গেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারের অধিকাংশই মন্তব্য করেছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হতেন। একইভাবে চলমান নানা সমস্যার সমাধান ও ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমেও অনেক ভালো করতেন বাইডেন। এসব ইস্যুতে বাইডেনকে ৪৮ শতাংশ এবং ট্রাম্পকে ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিয়েছেন।
এক হাজার রেজিস্টার্ড ভোটার অংশ নেন এই জরিপে। তবে জরিপ ফলাফলকে ‘ফেইক’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত নির্বাচনের আগেও সবকটি জরিপে হিলারী ক্লিন্টন অনেক এগিয়ে ছিলেন বলে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশের পরও ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যমের জরিপে কান দিচ্ছেন না। যদিও এই জরিপ চালিয়েছে ট্রাম্পের সমর্থক ফক্স নিউজ।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘সর্বোপরি আমি এসব ফেইক জরিপে বিশ্বাসী নই। আমার প্রতি আমেরিকানদের সমর্থন আগের মতোই রয়েছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেও এমন ফলাফল দেখেছি।’
সামনের সোমবার শুরু হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন। ভার্চুয়ালে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনেই ডেলিগেটরা চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন বাইডেন-কমলাকে। একইভাবে রিপাবলিকানরাও পুনরায় মনোনয়ন দেবেন ট্রাম্প-পেন্সকে। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। করোনার কারণে উভয় দলই টিভি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ফোন-ইমেইলে ভোট প্রার্থনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনেও সিংহভাগ ভোটার তাদের ব্যালট পাঠাবেন ডাকযোগে-সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি।
এদিকে, কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট ঘোষণার চার ঘণ্টার মধ্যে বাইডেনের নির্বাচনী তহবিলে ১০.২ মিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। ফলে ট্রাম্প এবং বাইডেনের তহবিলের ব্যবধান শূন্যে নেমে এসেছে ১৩ আগস্ট। উভয়েই ১৬৫ মিলিয়ন ডলার করে সংগ্রহ করেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কমলা হ্যারিস ২০১৩ ও ২০১১ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নির্বাচন করার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প মোটা অর্থ দিয়েছেন। অথচ বাইডেন কর্তৃক রানিং মেট ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যে, কমলা যে বড় মাপের একজন আইনজীবী ও জনপ্রিয় রাজনীতিক, তা জানেন না।
হোয়াইট হাউজে প্রেস ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিস্ময় প্রকাশ করে ট্রাম্প আরও বলেন, ডেমোক্র্যাটরা কীভাবে এমন একজন ‘বাজে’ নারীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিচ্ছে, তা বোধগম্যে আসছে না।
প্রসঙ্গত, জো বাইডেন আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারলে কমলা হ্যারিস তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করবেন।
কমলা হ্যারিস নিজে এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চেয়েছিলেন; কিন্তু নির্বাচনী প্রতিযোগিতার একপর্যায়ে তিনি সরে দাঁড়ান। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কমলা হ্যারিসের শক্ত অবস্থানের জন্য বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রানিং মেট হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করেন জো বাইডেন। কমলা হ্যারিস হলেন প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং প্রথম কোনো এশিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দ্বিতীয় শীর্ষ পদের নির্বাচনে লড়তে যাচ্ছেন। কমলাকে বাছাই করায় বাইডেনের প্রশংসা করেছেন হিলারি ক্লিনটন-সহ শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতারা। প্রশংসার তালিকায় সবচেয়ে বড় নাম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
কমলা বর্তমানে ক্য়ালিফোর্নিয়ার সিনেটর। এর আগে, তিনি সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ছিলেন। ক্য়ালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন কমলা।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন