প্রত্যয় ডেস্ক, বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ অশুভ শক্তিকে বিনাশকারি দূর্গা-দেবীকে বরণ করে নিতে ঠাকুরগাঁওয়ের মন্ডপগুলোতে এখন চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি । ইতোমধ্যে জেলার ৪৭৫টি মন্ডপে প্রতিমা নির্মাণ শেষে চলছে রং তুলির কাজ। ষষ্ঠি পূজার পুর্বে সবকটি মন্ডপে প্রতিমা হস্তান্তর করতে চলছে মালাকারদের ব্যস্ততা।
দুর্গামন্ডপ হতে করোনা ভাইরাস যাতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য মন্ডপ কমিটির লোকজনের সঙ্গে চলছে প্রশাসনের দফায় দফায় মতবিনিময় সভা।
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব দূর্গা পূজা। অসুরের আগমনে পৃথিবী যখন অস্থির হয়ে উঠে, মানুষে মানুষে চলে হানাহানি ওই সময় দূর্গা দেবীর আগমন ঘটে দূর্গতিনাশিনি হিসেবে। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ৪৭৫টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করেছেন । প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ করতে মালাকাররা রাতদিন কাজ করে চলেছেন । সেজন্য মালকারদের এখন নাওয়া খাওয়ার ফুরসত নেই। একজন মালাকার একাধিক মন্ডবেব প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে থাকায় তারা দলবল নিয়ে এখন মহাব্যস্ত।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার প্রতীমার কারিগর (মালাকার) অবিনাশ মেম্বার বলেন, এ বছর আমি ৯ টি মন্ডপের দায়িত্ব পেয়েছি। করোনার কারণে এবার দেরীতে কাজ শুরু করায় এখনও প্রতীমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে ২/১ দিনের মধ্যে সবকটি প্রতীমা হস্তান্তর করতে পারব।
মালাকার বিশ্বজিৎ রায় বলেন, এবার এটেল মাটি, খড়, রঙ ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। বন্যার কারণে বেড়েছে খড়ের দাম। এখন একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে কমপক্ষে ৪শ টাকা। খরচ বেড়ে যাওয়ায় মন্ডপ কমিটি যে মজুরী দেয় তাতে তাদের পোষায় না। শুধুমাত্র মা দুর্গার সন্তুষ্টির জন্য এসব কাজ করে চলেছেন।
সুমন রায় বলেন,বর্তমানে চলছে প্রতীমার কাজের পিক আওয়ার। স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতীমা হস্তান্তর করতে হবে তাই আমরা এখন মহা ব্যস্ত। নাওয়া খাওয়ার সময় পাচ্ছি না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৪/১৫ ঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা চলমান রয়েছে । করোনার কারণে এবার মাইক, আলোকসজ্জা ও আরতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।বিশেষ করে প্রশাসন মাইক ও আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পূজারিরা।কারণ এতে বিপুল পরিমাণ খরচ হতে নিস্কৃতি পাবেন তারা।
বেঁচে যাওয়া ওই টাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন ও স্যানেটাইজার সহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহে ব্যয় করবেন বলে জানান রুহিয়া রামনাথহাট পূজা মন্ডপ কমিটির সদস্য গণেশ চন্দ্র রায় ।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার ৪৭৫টি পূজা মন্ডপ রয়েছে। ইতোমধ্যে পূজামন্ডপগুলোর আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য জেলা, উপজেলা ও মন্ডপ ভিত্তিক পূজা উৎযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ স্ট্যাকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা সাজানো হয়েছে। টহল টিম থাকবে, যারা আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে। সাদা পোশাকে পুলিশ, ডিবি ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। কোন মন্ডপে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা দেখা দিলে সেখালে মোবাইল টিম মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থাকবে। তাদের প্রত্যেকের সনাক্তকরণ মাস্ক থাকবে যা; দেখে সহজে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে তারা স্বেচ্ছাসেবক টীমের সদস্য। স্বেচ্চাসেবিদের একটি তালিকা থানায় থাকবে। স্বেচ্ছাসেবীর বেশে কেউ যাতে নাশকতা মূলক কোন কাজ করতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।