ওয়েব ডেস্ক: ধান শুকানো ও সংরক্ষণ করতে দেশের ২৪টি জেলার ২৯টি উপজেলায় ৩০টি সাইলো বা গুদাম নির্মাণ করবে সরকার। মঙ্গলবার (৮ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প)’ নামের প্রকল্পটি ১ হাজার ৪০০ কোটি ২২ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করবে খাদ্য অধিদফতর।
প্রকল্পের উদ্দেশ হলো-কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার মাধ্যমে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য প্রদান, সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন, কীটনাশক বিহীন মজুত ব্যবস্থার মাধ্যমে ২-৩ বছর শস্যের পুষ্টিমান বজায় রাখা, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মজুত শস্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
খাদ্য অধিদফতর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাবিত ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা হলে আগামী তিনবছরের মধ্যে দেড় লাখ মেট্রিক টন ধান সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আসা ধান ঝাড়াই-বাছাই, শুকানো, ওজন করাসহ নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে পরিবেশবান্ধব কীট নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘ সময় ধান সংরক্ষণের জন্য আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা হবে। এর ফলে কৃষক সহজেই সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে উৎসাহিত হবে এবং উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে।
যে জেলায় নির্মাণ হবে ৩০টি সাইলো বা গুদাম
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে, ফরিদপুর সদরে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে, জামালপুরের মেলান্দহে, শেরপুরে শ্রীবর্দীতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে, নোয়াখালীর সদরে, কুমিল্লা সদরে, দিনাজপুরের সদর ও বিরলে, ঠাকুরগাঁও সদরে, পঞ্চগড়ের বোদায়, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায়, নওগাঁর শিবপুরে ও রানীনগর, পাবনার ঈশ্বরদীতে, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও শেরপুরে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে, সিলেটের কানাইঘাটে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের সদরে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে, ভোলার চরফ্যাশনে এবং পটুয়াখালীর সদর ও কলাপাড়ায়।
খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বর্তমান সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফল ভালো হয়েছে। বাংলাদেশে কৃষকের ধান সংরক্ষণের ক্ষমতা কম থাকায়, বিশেষ করে আউশ ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানের আর্দ্রতা থাকায় দ্রুত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যে কারণে উৎপাদন পরবর্তী স্বল্প সময়ের মধ্যেই কৃষক ধান বাজারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। ফলে স্বল্প সময়ে বাজারে ধানের সরবরাহ বেড়ে যায় এবং ধানের মূল্য কমে যায়। এর ফলে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে ব্যর্থ হয়। বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের মতো অন্যান্য দুর্যোগের কারণেও কৃষক ধান সঠিকভাবে শুকাতে ও সংরক্ষণ করতে পারে না। ফলে পোস্ট হার্ভেস্ট লস অনেক বেড়ে যায়।
এসব বিষয় বিবেচনায় তা প্রশমনের জন্য সরকার যথা সময়ে কৃষকের কাছ থেকে অধিক পরিমাণে ধান ক্রয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। খাদ্য অধিদফতরের নিজস্ব সংরক্ষণ ক্ষমতা পর্যাপ্ত না থাকায় সব সময় কৃষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান সরাসরি ক্রয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এতে প্রায়ই কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এ লক্ষ্যে ৩টি বিনের সমন্বয়ে ৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ২০০টি ধানের সাইলে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে পাইলটিং আকারে ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় খাদ্য অধিদফতর।