এ এম উবায়েদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রেম করে বিয়ে এবং পরিবার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে মেয়ের পরিবার কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় করেন অপহরণ মামলা, দেখতে দেখতে কেটে যায় প্রায় ১০ মাস। এরমধ্যেই মেয়েটির কোলজুড়ে আসে একটি সন্তান। সন্তানের বয়স সবেমাত্র দশ দিন।
এদিকে পুলিশ মেয়েটির পরিবারের করা অপহরণ মামলায় অবশেষে গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে মেয়ে এবং তার নবজাতক সন্তানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে নারী হেল্প ডেক্স রুমে তাদের থাকতে দেন।
সরজমিনে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীতে মেয়েটি এবং তার নবজাতক সন্তান নারী হেল্প ডেস্কে তোশক বিছিয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছেন। এমন দৃশ্য দেখে মেয়েটিকে এ প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন ‘এখানে তোশক ও কম্বল কিভাবে পেলেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে মেয়েটি বলেন, ‘শীতে গা কাঁপছিল। টিকতে পারছিলাম না। গায়ে পরার মতো শীতবস্ত্রও নেই আমাদের। এসব দেখে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ ২টি কম্বল ও তোশক এনে দিয়েছেন। ওসি সাহেব না থাকলে এই শীতের রাতে আমার দুধের শিশুটি কনকনে শীতে মরে যেতো। ওসি সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই অন্তর থেকে। উনি আমার দুধের শিশুটিকে রক্ষা করে মন জয় করে নিয়েছেন’।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভীর রাতে শীতের তীব্রতা বাড়লে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ মেয়েটি এবং তার নবজাতক সন্তানের খোঁজ খবর নিতে এসে দেখেন শীতের প্রকোপে যবুথবু হয়ে আছেন তাঁরা। তীব্র শীত। তার ওপর ঠান্ডা হাওয়া। শরীর জমে যাচ্ছে তাঁরা। এ অবস্থায় থাকলে ভিকটিম মা ও তাঁর নবজাতক শিশুটি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কনকনে শীতের রাতে কোন উপায় না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁর নিজ বাসার বিছানার তোশক ও ২টি কম্বল এনে দেন ভিকটিম মা ও ১০ দিনের নবজাতক শিশুর শীতের কস্ট নিবারণে। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন মডেল থানার ওসি। কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলছে, থানার ওসির এমন মহানুভবতার মনোভাব সকলের মন কেড়ে নিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। আমি যখন দেখলাম ভিকটিম মা ও শিশু বাচ্চাটি শীতে কষ্ট করছে তাৎক্ষণিক ২টি কম্বল এর ব্যবস্থা করি। রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতের তীব্রতা বাড়লে তাদের কষ্ট হচ্ছে দেখে নিজের বিছানার তোষক এনে তাদের দেই। যাতে তাদের শীতের রাতে ঘুমাতে কোন কষ্ট না হয়।