মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: এবার মাত্র ৫ দিনের মাথায় আজ বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুতে বসতে যাচ্ছে ৩৬তম স্প্যান। সেতুর ২ ও ৩ নম্বর পিয়ারে ১বি নামের এ স্প্যানটি বসানো হবে। এতে দৃশ্যমান হবে সেতুটির ৫ হাজার ৪০০ মিটার অবকাঠামো। এটি বসে গেলে বাকি থাকবে আর মাত্র ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ। এর পূর্বে গত ৩০ অক্টোবর বসানো হয়েছিল ৩৫তম স্প্যান। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর পুরো অবকাঠামো। সংশোধিত সময় অনুযায়ী ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে।
পদ্মাসেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তের সেতুর ২ ও ৩ নং পিয়ারের ওপর আজ বসানো হবে ৩৬তম স্প্যান। এ পর্যন্ত পদ্মাসেতুতে ৩৫টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে সেতুটির ৫ হাজার ২৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। আর বাকি আছে ৬টি স্প্যান বসানোর কাজ। আজ ৩৬তম স্প্যানটি বসে গেলে বাকি থাকবে ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে সব স্প্যান সেতুতে বসানোর কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী আজ ৫ নভেম্বর পিয়ার ২ ও ৩ নম্বরে ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি), ১১ নভেম্বর পিয়ার ৯ ও ১০ নম্বরে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নভেম্বর পিয়ার ১ ও ২ নম্বরে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নভেম্বর পিয়ার ১০ ও ১১ নম্বরে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর পিয়ার ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) ও ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (স্প্যান ২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হবে।
দেওয়ার আব্দুল কাদের আরো জানান, সংশোধিত সময় অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৪২টি পিয়ারের সব ক’টি সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে হত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫টি স্প্যান বসে গেছে। আজ ৩৬তম স্প্যান বসে গেলে বাকি থাকবে আর মাত্র ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার সিডিউল রয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ভায়াডক্টের মোট ৪৮৪টি সুপারটি গার্ডরের মধ্যে ২৫৮টি গার্ডার বসানো হয়েছে।
মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ পয়েন্ট ৫০ ভাগ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ পয়েন্ট ৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নদী শাসনের অগ্রগতি ৭০ ভাগ এবং এর অর্থিক অগ্রগতি ৬৩.০৩ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নদী শাসনের কাজের চুক্তি মূল্য ৮৭০৭.৮২ কোটি টাকা, এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫৪৮৮.৭৬ কোটি টাকা। সেতুর সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এড়িয়ার শতভাগ কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া কাজের বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪৯৯.৫১ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৪৩৪২.২৬ কোটি টাকা। পরামর্শক সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট, আয়কর, বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য খাতে বরাদ্দ ৪৫১০.৪২ কোটি টাকা। সেতুর মোট প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। গতকাল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩৭৯৬.২৪ কোটি টাকা (৭৮.৮১ভাগ)। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ ভাগ।
এর পূর্বে সকল প্রকার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা শেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর মূল কাঠামো।